Header Ads

Header ADS

বুকে ভর দিয়ে চলা মেরুদন্ডি প্রাণীর নাম 'সাপ'

'সাপ' শব্দটি শুনলেই এক অজানা আতঙ্কে আমরা শিহরিত হই। সাপ প্রকৃতির এক বিচিত্র সৃষ্টি। এই প্রাণিটি যেমন অদ্ভুদ তেমনি তাদের সম্পর্কে মানুষের কৌতুহল ও ভীতিও সীমাহীন। বিবর্তনের ধারায় উভচরের পর সরীসৃপ (জবঢ়রঃরষরধ) নামে যে শ্রেণীর আবির্ভাব সাপ তারই অন্তর্গত। এই শ্রেণীর যে সব প্রাণীরা সাধারণতঃ বুকে ভর দিয়ে চলাফেরা করে তাদেরকে সাপ (ঝহধশ) বলা হয়। বিভিন্ন বিলুপ্ত সরীসৃপের ফসিল এবং বর্তমানে জীবিত সরীসৃপদের পর্যবেক্ষণ করে এদের মাথার খুলির ফোকরের (ঞবসঢ়ড়ৎধষ ভড়ংধ) উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণীকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। ঝঢ়যবহড়ফড়স গিরগিটি, সাপ, কুমির, ডাইনোসর, চবঃৎড়ংধঁৎরধ এদের সকলের খুলিতে দু'টি ফোকর অর্থাৎ এরা উরধঢ়ংরফধ\' । জীব বিজ্ঞানীদের মতে সাপ জাতীয় প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে কোন না কোন টিকটিকি জাতীয় প্রাণী থেকে। সাপ হবার আগে টিকটিকি জাতীয় প্রাণীর একটি দল হাত, বহিঃকর্ণ, চোখ হারিয়ে মাটির নিচে বসবাস শুরু করে আজ থেকে প্রায় ১২.৫ কোটি বছর পূর্বে। এরাই আবার অনুকুল পরিবেশে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং বর্তমানে সাপ হিসেবে বসবাস করছে। তবে ঠিক কোন নির্দিষ্ট টিকটিকির দল থেকে এদের উদ্ভব হয়েছে সেটা এখনো অজানা এবং গবেষণার বিষয়।
এলাকা এবং ঋতুভেদে সাপের আকার, আয়তন এবং চেহারার আমূল পরিবর্তন হয়। সেজন্য সাপের সর্বমোট প্রজাতির সংখ্যা নিয়ে যথেষ্ঠ মতবিরোধ আছে। সমস্ত জীবিত সাপের প্রজাতির সংখ্যা নিয়ে যথেষ্ঠ মতবিরোধ আছে। সমস্ত জীবিত সাপের প্রজাতির সংখ্যা প্রাণিবিজ্ঞানী ঔ. ঝঃরফড়িৎঃযু (১৯৭২) এর মতে, ৩১৭১, ঊহমবষসধহহ এবং ঋ.ঔ. ঙনংঃ (১৯৮৪) এর মতে ২৫০০-২৭০০। এর মধ্যে মাত্র ২৫০ প্রজাতির সাপ বিষধর। বাংলাদেশে ব্যাপক গবেষণার অভাবে মোট প্রজাতির সংখ্যা অজানা তবে আনুমানিক ৮০ ধরা হয়। সমগ্র ভারতবর্ষে আছে মোট ২৫০ প্রজাতি।
পৃথিবীর এমন কিছু দেশ আছে যেখানে কোন সাপ নেই। ইউরোপ, এশিয়া এবং কুমেরুতে বরফাবৃত থাকার ফলে সাপ নেই। তাপের দেহের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে ওঠানামা করে। ফলে শীতল বরফে সাপের দেহের তাপমাত্রা এতো নিচে নেমে যায় যে, সাপ বাঁচতে পারে না। মূল ইউরোপ মহাদেশে স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং আর্কটিক অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত রাশিয়ার অংশে সাপ নেই। আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, গ্রীণল্যান্ড, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, মেডেইরা, কেপ ভারভি দ্বীপপুঞ্জ এবং নিউজিল্যান্ডে সাপ দেখা যায় না। এছাড়া মাদাস্কাগার, বৃহৎ এনটিলিস, গেলাপ্যাগোস, হাউয়াই, মাইক্রোনোসিয়া এবং পলিনেশিয়া কোন বিষধর সাপ নেই। এরপর পৃষ্ঠা-৩
শেষ পৃষ্ঠার পর... কমবেশি সব প্রাণিরই হাত-পা আছে, অথচ সাপের নেই। এটাই মনে হয় মানুষের ভিতর সাপ সাপ সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের উদ্রেক করলেও ভয় বা এড়িয়ে চলার প্রবণতা বাড়ায়। তবে সাপকে ভয় করার মূল কারণ হচ্ছে এর বিষাক্ত কামড়। অধিকাংশ সাপ বিষধর না হলেও সাপের ভয় সার্বজনীন এবং এতটা গভীর যে অবিষাক্ত সাপের কামড়েও বহু লোক মারা যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাপে কাটা রোগীদের প্রায় অর্ধেক মারা যায় ভয়ে এবং বাকীরা অন্যান্য কারণে। সাপের চোখ খুব উন্নত নয়। খোলস ছাড়ার সময় সাপ চোখে দেখে না। সাপের কানের পিনা এবং ছিদ্র কোনটাই নেই, নেই মধ্যকর্ণও। শুধু আছে অন্তঃকর্ণ, যা খুব উন্নত। ফলে সাপ বায়ু বাহিত শব্দ গ্রহণ করতে পারে না, তবে কিছু কিছু বায়ু বাহিত শব্দ ফুসফুসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। সাপ যে সমস্ত জিনিসের মধ্যে চলাচল করে তার মধ্য দিয়ে কোন শব্দতরঙ্গ প্রবাহিত হলে তা গ্রহণ করতে পারে। সাপের দ্বি-খন্ডিত, সূঁচালো জিভকে সাপের জীব বললে খুব একটা বাড়াবাড়ি হয় না। তার জিভ এবং উপরের তালুর জেকবসন অঙ্গ একত্রে নাক, কান, চোখের কাজ করে।
সাপের খাদ্য তালিকায় প্রধান হচ্ছে, ব্যাঙ এবং ইঁদুর। কিছু কিছু প্রজাতি যেমন, রাজগোকরা এবং সাকিনী সাপ কেবল অন্য সাপ খায়। সামুদ্রিক সাপ এবং মেটে ঢোঁড়া সাপ মাছখেকো। মাটির নিচে বসবাসকারী দু'মুখো সাপ পিঁপড়া এবং ছোটখাট পোকামাকড় খায়। তবে পৃথিবীর কোন সাপেরই দু'টি মুখ থাকে না। কোন সাপের লেজের দিকটা মুখের মতো তাই দু'মুখো মনে হয়। শোনা যায়, দাঁড়াশ সাপ গরুর দুধ খায়। প্রকৃতপক্ষে গরুর বাঁট থেকে দুধ চুষে খাবার জন্য কোন ব্যবস্থা সাপের মুখে নেই। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ঠোট, গাল ও জিহ্বার সাহায্যে চুঁষে দুধ খায়। সাপ এমনকি কোন খাবার চিবিয়ে খেতে পারে না। সাপ গিলে খাদ্য গ্রহণ করে। সাপের মুখের অস্থিগুলো একের সাথে অন্যে স্থিতিস্থাপক তন্তু দিয়ে যুক্ত। ফলে সাপ নিজের মুখের চেয়ে দু'তিন গুণ বড় খাদ্যও গ্রহণ করতে সক্ষম।
বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়লেও কিছু সাপ বাচ্চা প্রসব করে। যদিও এদর এই বাচ্চা প্রসব স্তন্যপায়ীদের থেকে ভিন্ন। আসলে এরাও ডিম পাড়ে। কিন্ত ডিম দেহের বাইরে না এসে পেটের ভিতরেই থেকে যায়। ভ্রুণে পেটের ভিতর ডিম বড় হয়। মেটে ঢোঁড়া, লাউডগা, চন্দ্রবোড়া, সবুজবোড়া এবং অধিকাংশ সামুদ্রিক সাপ বাচ্চা জন্ম দেয়।
পৃথিবীর সব বিষাক্ত সাপ হুক বা বিকনোজড সি স্নেক (ঊহযুফৎরহধ ঝপযরংঃড়ংধ), তবে এরা সহজে কামড়ায় না। শোনা যায়, পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সাপ দক্ষিণ আমেরিকার এনাকোন্ডা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে যত সাপ বেঁচে আছে তারমধ্যে সবচেয়ে লম্বা হলো গোলবাহার জবঃরপঁষধঃবফ চুঃযড়হ (চযুঃযড়হ জবঃরপঁষধঃঁং) তবে গোলবাহারের চেয়ে এনাকোন্ডা ওজনে দেড় থেকে দু'গুণ বেশি, কারণ এরা মোটা। ঊহমবষসধহহ এবং ঙনংঃ (১৯৮৪)-এর মতে, গোলবাহার ৯.৬ মিটার (কোন কোন রেকর্ডে ১২.২ মিটার) এবং এনাকোন্ডা ৯.১ মিটার (কোন কোন রেকর্ডে ১১.৩ মিটার) লম্বা হয়।
সাপের সৌন্দর্য নিয়ে মাথা ঘামানোর ধৈর্য খুব অল্প লোকেরই আছে। সুন্দরীদের দলে আছে শঙ্খিনী, লাউডগা, কালনাশিনী, চন্দ্রবোড়া ইত্যাদি। এছাড়া বিদেশী প্রবাল সাপ এবং কিং সাপের কিছু কিছু উপ-প্রজাতি দেখতে অপূর্ব।
সুদূর অতীত কাল থেকেই সাপ নিয়ে বহু রহস্য ও কল্পকথা প্রচলিত আছে। সাপের মণির অলৌকিক ক্ষমতা, সাপের প্রতিশোধ নেয়ার কাহিনী এরকম নানা ভুল ধারণা ও কুসংস্কার আমাদের সমাজে বেশ প্রচলিত। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে সাপ হিংস্র প্রাণী নয়। আত্মরক্ষা এবং শিকার ছাড়া অন্য কোন কারণে সাপ কামড়ায় না। সাপুড়ের বীণ শুনে সাপ আসে বা নাচে তা সত্য হতে পারে না, কারণ বাতাসে আসা শব্দ শোনার মতা সাপের নেই। কোন রহস্যময় জীব নয়, বুকে ভর দিয়ে চলা এক নিরীহ মেরুদন্ডি প্রাণীর নাম সাপ।

No comments

আমাদের ঠিকানা

রংপুর।, Bangladesh
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, টাউন হল চত্বর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭১৯৪৬৩৫৪১, ০৭১৪৬০৭০৬৩৪, ০১৭৩৮২৮০২০১। E-mail: muktochintabcp@gmail.com
Powered by Blogger.