Header Ads

Header ADS

ভোক্তা অধিকারঃ কি খাচ্ছি?


ভোক্তা অধিকার আইনে দেশের সকল নাগরিকের বিশুদ্ধ মানসম্মত খাদ্যদ্রব্যের অধিকার থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। শিশু খাদ্যের কথাই ধরা যাক-একটি শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য কি কি খাদ্য সে বিষয়ে এখনও রয়েছে অস্পষ্টতা। বিষয়ে অনেকে মায়ের দুধের কথা বললেও মিডিয়া কুসংস্কার আর অশিক্ষার পাল্লায় পড়ে অনেকে বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা করেন যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর দৈহিক মানসিক বিকাশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। শিশুদের বৃদ্ধি বুদ্ধিবিত্তিক বিকাশে কি কি খাদ্য খাওয়ানো উচিত সে বিষয়ে মুক্তচিন্তা মুখোমুখি হয়েছিল শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ সাইদুল ইসলামের।
মুক্তচিন্তাঃ একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য কি কি খাবারের পরামর্শ আপনার দেন?
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ ছয়মাস বয়স পর্যন্ত একটি শিশু শুধুমাত্র তার মায়ের দুধই খাবে। তার অন্যকোন খাবারের দরকার নেই। ছয়মাস পর সহায়ক খাবার হিসেবে ভাত, ডিম, খিচুরি, ভাতের মাড়, ময়দা ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে।
মুক্তচিন্তাঃ শিশুদের বাড়তি খাবার হিসেবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডে গুড়ো দুধ খাওয়ানো হয়। সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ বাচ্চাদের বাড়তি খাবার হিসেবে আমরা কখনই গুড়ো দুধ খাওয়াতে বলি না।
মুক্তচিন্তাঃ শিশুদের শারীরিক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুড়োদুধের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন।
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ শিশুদের শারিরীক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুড়োদুধের ভূমিকা এককথায় বলতে গেলে নেতিবাচক। শারীরিক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সবকিছুতেই মায়ের দুধে যে জিনিসটা থাকে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গুঁড়োদুধ বা অন্য খাবার সেটা পারে না।
মুক্তচিন্তাঃ অনেক সময় দেখা যায় যে বাচ্চা বুকের দুধ পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্রান্ডের গুড়ো দুধ দেয়া হয় এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ আসলে আমরা এঙ্ক্লুসিভ ফুড বলতে শুধু বুকের দুধ খাবে অন্যথায় একফোটা পানিও না। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে যেগুলো বললাম সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে বাঁচানোর স্বার্থে আমরা বিভিন্ন ব্রান্ডের গুঁড়োদুধ দিয়ে থাকি এবং বাচ্চার বয়ষ ছয়মাসের বেশি হলে আমরা অন্যান্য সহায়ক খাবার দিয়ে থাকি। যেমন-নরম খিচুরী, ডিম, ডাল, চাল, সয়াবিন তেল, পরিমানমতো লবন ইত্যাদি। বাহিরের কোন খাবার দিতে সাধারণত নিষেথ করি।
মুক্তচিন্তাঃ মায়ের অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে বুকের দুধ কমে গেলে সেক্ষেত্রে আপনারা কি করেন?
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ বাচ্চার যদি সমস্যা থাকে- বাচ্চার যদি তালু ফাটা থাকে, ঠোঁট ফাটা থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়াতে নিষেধ করি। পাশাপাশি যদি মায়ের এরকম কোন অসুখ হয় যেমন ধরেন-ফাইরোট্রঙ্কি এসিড তার জন্য যদি সে ঔষধ খেতে থাকে ক্যানসারের কোন ঔষধ খেতে থাকে সেসব ক্ষেত্রে আমরা মায়ের দুধকে না খাওয়াতে বলি কিংবা আরো কিছু রোগ আছে বাচ্চাদের রোগ ধরেন গ্যালাকটোস ইনটলারেন্স এসব ক্ষেত্রে আমরা মায়ের দুধকে না খাওয়াতে বলি। সে ক্ষেত্রে অন্য আর্টিফিসিয়াল মিল্ক দিতে বলি। আর্টিফিসিয়াল বিভিন্ন কোম্পানীর দুধ পাওয়া যায় যার জন্য যেটা উপযোগী তাকে সেটা খাওয়াতে বলি। আর্টিফিসিয়াল দুধ যেগুলো পাওয়া যায় ধরেন কৌটার দুধের মধ্যে মায়ের দুধের কিছু কিছু গুণাবলী সবগুলো পাওয়া সম্ভব নয় তবে কিছু কিছু গুণাবলী পাওয়া যায়। আমরা সেগুলো খাওয়াতে বলি। এভাবে ছয়মাস পরে আমরা উইনিং খাবার দিতে বলি অর্থাৎ বুকের দুধের পাশাপাশি কিছু উইনিং খাবার যেমন প্রথম ছয়মাস আমরা শুধু বুকের দুধ খেতে বলি তারপর সম্পূরক বা উইনিং খাবার দিতে বলি।
মুক্তচিন্তাঃ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা এই তথ্য পাচ্ছি যে, বিভিন্ন ব্রান্ডের গুঁড়োদুধ শিশুদের খাওয়ানোর ফলে তারা অন্য শিশুদের চেয়ে লম্বা হচ্ছে বা কারও অন্যান্য খাবারের প্রতি রুচিবোধের সৃষ্টি হচ্ছে, মেধায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে এই তথ্যগুলোর সত্যতা কতটুকু?
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। এককথায় বলা যায় মায়ের দুধের চেয়ে আর কোন খাবার হতে পারে না।
মুক্তচিন্তাঃ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা এই তথ্য পাচ্ছি যে, বিভিন্ন ব্রান্ডের গুঁড়োদুধ শিশুদের খাওয়ানোর ফলে তারা অন্য শিশুদের চেয়ে লম্বা হচ্ছে বা কারও অন্যান্য খাবারের প্রতি রুচিবোধের সৃষ্টি হচ্ছে, মেধায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে এই তথ্যগুলোর সত্যতা কতটুকু?
মুক্তচিন্তাঃ তাহলে আমরা প্রতিদিন যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখছি সেগুলো কি সম্পূর্ণ মিথ্যা?
ডাঃ সাইদুল ইসলামঃ হঁ্যা আমি এগুলোকে মিথ্যা এবং প্রতারণামূলকই বলব।

উপরের আলোচনার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, একটি শিশুর খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বুকের দুধই প্রধান। তাহলে মায়ের দুধ বাদ দিয়ে বায়োমিল বা অন্যান্য খাদ্য দানে অভিবাবকরা এতো উৎসাহী কেন? বিষয়ে একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে, এর পিছনে রয়েছে পুঁজির নোংরা আধিপত্য। পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় সবকিছুই আজ ক্রয়-বিক্রয় যোগ্য পণ্য। আর মূনাফাই যেখানে প্রধান লক্ষ্য সেখানে বৈধ-অবৈধ, শুদ্ধ-বিশুদ্ধতার কোন মূল্য নেই। সামপ্রতিক সময়ে চীনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বিষাক্ত মেলামাইনযুক্ত গুঁড়োদুধ গ্রহণ করে সেখানে মারা যায় প্রায় ২০০ শিশু। গুরুতর অসুস্থ হয় আরো অসংখ্য সবচেয়ে আতংকের বিষয় এই সব নামীদামি ব্রান্ডের গুঁড়োদুধ কোনরকম পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশ করে আমাদের মতো তথাকথিত পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে। সেখানে বিএসটিআই নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর হাস্যকর রূপে প্রতীয়মান হয়।

গুঁড়োদুধ নিয়ে বিএসটিআই এর ভূমিকাঃ বাংলাদেশের বাজারে সকল পণ্যের বাজারজাত করণের অনুমোদন দেয় বিএসটিআই গতবছর চীনে মেলামাইন মেশানো গুঁড়োদুধ খেয়ে শিশু মৃতু্যর ঘটনা ঘটলে বিএসটিআই বাজার থেকে ৪০ ধরণের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজধানীর চারটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগারে পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিএসটিআই, সায়েন্স ল্যাবরেটরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ণ বিভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উত্তরার প্লাজমা প্লাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি ব্রান্ডের গুঁড়োদুধের মেলামাইনের অস্তিত্ব মেলে। প্লাজমা প্লাস পাঁচটি ব্রান্ডের দুধের রিপোর্ট পেশ করেছে। অন্য দুইটি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই সায়েন্স ল্যাবরেটরী গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেনি। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো একেক গবেষণাগারের গবেষণার রিপোর্ট ভিন্ন। একই উপাদানের গবেষণার ফলাফলের এই ভিন্নতা কেন? বাজারে আসমা ৪০টি গুঁড়োদুধকে বিএসটিআই কিসের ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছিল? মেলামাইনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গুঁড়োদুধ পরীক্ষার জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। লন্ডনে প্রাপ্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হলো না কেন?

বিজ্ঞাপনের রঙিন চমক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, বিভিন্ন ব্রান্ডের গুঁড়োদুধ/শিশুখাদ্য খেলে শিশু লম্বা হয়, মেধায় এগিয়ে যায়, রুচিবোধ তৈরি হয় তাদের দাবির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি? ভিত্তিহীন তথ্য সম্মৃদ্ধ বিজ্ঞাপন প্রচার হয় কিসের যুক্তিতে?

তাহলে প্রশ্ন জাগে বিদ্যমান রাষ্ট্রিক, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের সুষ্ঠু সত্যিকারের বিকাশের নিশ্চয়তা দেয় কতটুকু? যদি না দেয় তাহলে, সত্যিকারের সুষ্ঠু মানবিক বোধ সম্পন্ন যে সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থা সেই নিশ্চয়তা দেয় তার অনুসন্ধান অণুশীলন জরুরী। শুধুমাত্র এর মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ভোক্তার অধিকার তথা মানুষের মানবিক সাম্য

No comments

আমাদের ঠিকানা

রংপুর।, Bangladesh
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, টাউন হল চত্বর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭১৯৪৬৩৫৪১, ০৭১৪৬০৭০৬৩৪, ০১৭৩৮২৮০২০১। E-mail: muktochintabcp@gmail.com
Powered by Blogger.