ইভ-টিজিং নয়, বিশুদ্ধ যৌন উৎপীড়ন
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে বখাটে তরুণদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা যেন বেড়েই চলেছে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা নারীর বিরুদ্ধে একটি যৌন সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নয় – যা আমাদের সমাজের অন্তর্গত পুরুষতান্ত্রিক, তথা অগণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
এই উত্ত্যক্তকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও সংগঠিত হচ্ছে থেকে থেকে। কিন্তু প্রতিবাদকারীদের পরিণতি হয়ে চলেছে ভয়াবহ। মৃত্যু। এটা গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। সমাজ ও রাষ্ট্র নারীর ওপর যৌন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না। পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকজন নারী ইতোমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন। উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেও আবার কয়েকজনকে হত্যা করেছে উত্ত্যক্তকারীরা। কিন্তু এ পর্যন্ত এসব যৌন সন্ত্রাসীর কাউকেই দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। সমাজ ও রাষ্ট্রের দিক থেকে এ এক ভয়াবহ ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা যৌন উত্ত্যক্তকারী বখাটে তরুণদের জন্য একধরনের পরোক্ষ প্রণোদনা হিসেবে সক্রিয় থাকে। নারীর প্রতি বখাটে তরুণদের এই উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা কোনো বিচ্ছিন্ন সামাজিক ব্যাধি নয়। বরং নির্দিষ্ট পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি এই প্রবণতার পেছনে ক্রিয়াশীল। যে সামাজিক সংস্কৃতির মধ্যে এসব উত্ত্যক্তকারী তরুণ বেড়ে ওঠে সেই সংস্কৃতি ওই তরুণদের নারীর চেয়ে পুরুষের যোগ্যতা ও সামর্থ্য বেশি, ফলে তার পছন্দের কোনো নারীকে অধিকার করার তার অন্তর্গত ন্যায্যতা রয়েছে বলে সে ভাবতে শেখে। নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় না এই পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি। এমতাবস্থায়, কোনো মেয়ে যখন ছেলের প্রেমের কিংবা বিয়ের প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়, ছেলেটির পৌরুষ কিংবা পুরুষতান্ত্রিক অহম আহতবোধ করে। সে তখন বেপরোয়া হয়ে যায় – মেয়েটিকে অপদস্থ করার মাধ্যমে, কিংবা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করার মাধ্যমে, পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতিভূ ছেলেটি তার অহম পরিতৃপ্ত করে। অতএব, মেয়েদের এই যৌন সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য একদিকে যেমন সন্ত্রাসী তরুণদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, অন্যদিকে প্রয়োজন সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সচেতন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করা।
উল্লেখ্য, যারা সমাজের এ বখাটে তরুণদের থেকে মেয়েদের মুক্ত করার জন্য আন্তরিক ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের অনেকেও সমস্যাটির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক স্বরূপ বুঝতে এখনো সক্ষম হননি। নানান পত্র-পত্রিকায় ও রেডিও-টেলিভিশনে ওই নারী উৎপীড়নকে ‘ইভ-টিজিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ভেতর ওই রাজনৈতিক অসচেতনতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ইভ-টিজিং শব্দটি খুবই নিরীহ, নারীর বিরুদ্ধে যৌন উৎপীড়নের কুৎসিত চেহারাকে বেশ খানিকটা আড়াল করে এ শব্দবদ্ধ। ফলে তা বর্জনীয়।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ইভ-টিজিং বলে বিপুল অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা যে অপরাধকে চিহ্নিত করছে, তা মর্মের দিক থেকেই নারীর বিরুদ্ধে এক বিশুদ্ধ যৌন নিপীড়ন – যার শেকড় আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পুরুষতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের গভীরে প্রোথিত। এ যৌন নিপীড়ন থেকে সমাজকে মুক্ত করার লড়াই অতএব, পুরুষতান্ত্রিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে যথার্থ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ ইস্যুটি শেষ বিচারে রাজনৈতিক – যা কি না নারী-পুরুষের ভেতরকার অগণতান্ত্রিক ক্ষমতার সম্পর্ক বিলয়ের মধ্যদিয়ে নিষ্পত্তি হতে পারে। সেই সুদীর্ঘ সংগ্রামের পাশাপাশি উত্ত্যক্তকারী ছেলেদের প্রচলিত আইনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
তথ্যসুএঃ বুধবার
এই উত্ত্যক্তকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও সংগঠিত হচ্ছে থেকে থেকে। কিন্তু প্রতিবাদকারীদের পরিণতি হয়ে চলেছে ভয়াবহ। মৃত্যু। এটা গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। সমাজ ও রাষ্ট্র নারীর ওপর যৌন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না। পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকজন নারী ইতোমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন। উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেও আবার কয়েকজনকে হত্যা করেছে উত্ত্যক্তকারীরা। কিন্তু এ পর্যন্ত এসব যৌন সন্ত্রাসীর কাউকেই দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। সমাজ ও রাষ্ট্রের দিক থেকে এ এক ভয়াবহ ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা যৌন উত্ত্যক্তকারী বখাটে তরুণদের জন্য একধরনের পরোক্ষ প্রণোদনা হিসেবে সক্রিয় থাকে। নারীর প্রতি বখাটে তরুণদের এই উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা কোনো বিচ্ছিন্ন সামাজিক ব্যাধি নয়। বরং নির্দিষ্ট পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি এই প্রবণতার পেছনে ক্রিয়াশীল। যে সামাজিক সংস্কৃতির মধ্যে এসব উত্ত্যক্তকারী তরুণ বেড়ে ওঠে সেই সংস্কৃতি ওই তরুণদের নারীর চেয়ে পুরুষের যোগ্যতা ও সামর্থ্য বেশি, ফলে তার পছন্দের কোনো নারীকে অধিকার করার তার অন্তর্গত ন্যায্যতা রয়েছে বলে সে ভাবতে শেখে। নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় না এই পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি। এমতাবস্থায়, কোনো মেয়ে যখন ছেলের প্রেমের কিংবা বিয়ের প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়, ছেলেটির পৌরুষ কিংবা পুরুষতান্ত্রিক অহম আহতবোধ করে। সে তখন বেপরোয়া হয়ে যায় – মেয়েটিকে অপদস্থ করার মাধ্যমে, কিংবা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করার মাধ্যমে, পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতিভূ ছেলেটি তার অহম পরিতৃপ্ত করে। অতএব, মেয়েদের এই যৌন সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য একদিকে যেমন সন্ত্রাসী তরুণদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, অন্যদিকে প্রয়োজন সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সচেতন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করা।
উল্লেখ্য, যারা সমাজের এ বখাটে তরুণদের থেকে মেয়েদের মুক্ত করার জন্য আন্তরিক ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের অনেকেও সমস্যাটির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক স্বরূপ বুঝতে এখনো সক্ষম হননি। নানান পত্র-পত্রিকায় ও রেডিও-টেলিভিশনে ওই নারী উৎপীড়নকে ‘ইভ-টিজিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ভেতর ওই রাজনৈতিক অসচেতনতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ইভ-টিজিং শব্দটি খুবই নিরীহ, নারীর বিরুদ্ধে যৌন উৎপীড়নের কুৎসিত চেহারাকে বেশ খানিকটা আড়াল করে এ শব্দবদ্ধ। ফলে তা বর্জনীয়।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ইভ-টিজিং বলে বিপুল অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা যে অপরাধকে চিহ্নিত করছে, তা মর্মের দিক থেকেই নারীর বিরুদ্ধে এক বিশুদ্ধ যৌন নিপীড়ন – যার শেকড় আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পুরুষতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের গভীরে প্রোথিত। এ যৌন নিপীড়ন থেকে সমাজকে মুক্ত করার লড়াই অতএব, পুরুষতান্ত্রিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে যথার্থ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ ইস্যুটি শেষ বিচারে রাজনৈতিক – যা কি না নারী-পুরুষের ভেতরকার অগণতান্ত্রিক ক্ষমতার সম্পর্ক বিলয়ের মধ্যদিয়ে নিষ্পত্তি হতে পারে। সেই সুদীর্ঘ সংগ্রামের পাশাপাশি উত্ত্যক্তকারী ছেলেদের প্রচলিত আইনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
তথ্যসুএঃ বুধবার
No comments