Header Ads

Header ADS

দুইশত জন্মবার্ষিকীতে ডারউইন এবং ডারউইনবাদের অতীত ও বর্তমান : শাহ্ মুহাম্মদ ফরিদ


আধুনিক চিন্তা জগতের অন্যতম মহান স্রষ্টা চার্লস রাবার্ট ডারউইন আজ থেকে দুইশত বছর আগে ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারের শ্রিউসবেরিতে একটি ধনার্ঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ ইরেসমাস ডারউইন একজন নাম করা বিজ্ঞানী, কবি দার্শনিক ছিলেন। তাঁর পিতা রবার্ট ডারউইন একজন সফল চিকিৎসক ছিলেন। তিনি মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর মাতাকে হারান এবং বড় বোনের স্নেহ মমতায় বড় হতে থাকেন। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বাল্যশিক্ষা শুরু হয় শ্রিউসবেরিতেই। ডারউইন পড়ালেখায় ভীষণ অমনোযোগী ছিলেন। স্কুলে পড়াশোনার পরিবর্তে শিকার করা, মাছধরা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডিম সংগ্রহ এবং উন্মুক্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোই ছিল তার নেশা। তিনি ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে। তারপর তাকে চিকিৎসা বিদ্যা শেখার জন্য পাঠানো হয়। তিনি তৎকালীন চিকিৎসা বিদ্যায় খানিকটা বিরক্তি বোধ করেন এবং চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন অসমাপ্ত রেখে চলে আসেন। তার পিতা ছেলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েন। ১৮২৭ সালে তাকে ক্যামব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি করে দেন এবং ১৮৩১ সালে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ক্যাম্ব্রিজে অধ্যয়ন কালে উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক স্টিভেন হ্যানশ্লো এর সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। হ্যানশ্লো তাঁর মাঝে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের কিছু নজির খুঁজে পেয়েছিলেন। সে জন্য তিনি ডারউইনকে বিগল (বিগল হচ্ছে সেই জাহাজ যে জাহাজে ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের উপাত্তগুলি সংগ্রহ করেন। ) ভ্রমণের বিষয়টি অবহিত করেন। তার পরামর্শে ডারউইন ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর লন্ডনের প্লাইমাউথ বন্দর থেকে এইচ, এম, এস বিগল নামক জাহাজে যাত্রা শুরু করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ শেষে তিনি লন্ডনের ফলমাউথ বন্দরে ফিরে আসেন। ১৮৩৬ সালের অক্টোবর। এই দীর্ঘ ভ্রমণে ডারউইন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পাটাগনিয়া, উরুগুয়ে, চিলি, গ্যালাপোগাস দীপপুঞ্জ, অষ্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি অঞ্চলের কীটপতঙ্গ, উদ্ভিদ, পাখি, প্রজাপতি, শামুক অনেক জীবাশ্ম সংগ্রহ করেন। ইতমধ্যে তিনি ম্যালথাসের রচিত " এসে অন দ্যা প্রিন্সিপাল অব পলুলেশন" বইটি পড়েন এবং এই বইয়ের মাধ্যমে তার "প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব"-এর কিছু যু্িক্ত খুঁজে পান। অবশেষে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি " ঙৎরমরহ ড়ভ ঝঢ়বপরবং নু সবধহং ড়ভ হধঃঁৎধষ ংবষবপঃরড়হচ্ বইয়ে প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ এর নির্বাচন উপস্থাপন করেন। যা বিবর্তনবাদকে একটি বৈপ্লবিক রূপ দান করে। তাঁর এই "প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাাদ"টি আজ ডারউইনবাদ নামে সুপরিচিত। ডারউইন প্রকৃতিতে সংঘটিত সাধারন ঘটনবলীকে আরোহন অবরোহন চিন্তার বাঁধনে বেঁধে ফেলেন। তাঁর এই মতবাদ কতিপয় শর্ত প্রত্যয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি বিজ্ঞান। আনবিক জীববিদ্যার মাধ্যমে ডারউইনবাদকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা সংশ্লেষণবাদ বা নব্য ডারউইনবাদ নামে পরিচিত। ডারউইনবাদ রাজনীতিতে আজ নিপুণতার সাথে ব্যবহার হচ্ছে। মহান মণিষী কার্ল মাকর্স ডারউইনবাদের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন মানবসভ্যতার ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা। জন্যই তিনি তাঁর রচিত একটি বই ডারউইনের নামে উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু ডারউইন তাতে সম্মতি দেননি। কোন আদিম পূর্বপুরুষ থেকে হাজার হাজার বছর পর আজকের আধুনিক মানুষের উদ্ভব এসব চমকপ্রদ অজ্ঞাত তথ্য তিনি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে উপস্থাপন করেন। এছাড়াও সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা "ডারউইনবাদ"-এর দ্বারা প্রভাবিত। এসবের পরেও ডারউইনবাদ কথাটি শুনলে এখনও অনেকের মনে দানা বেঁধে ওঠে "এই মতবাদ বলে মানুষ বানর সমজাতীয়" আর এইসব হচ্ছে ধর্মবিরুদ্ধ কথা। ডারউইন আসলে বলেছিলেন, মানুষ এবং বানর প্রজাতি উভয়ই একই উৎস অর্থাৎ একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে; মানুষের উদ্ভব বানর থেকে নয়। বিজ্ঞানের যে কোন তত্ত্বই সমালোচনার শিকার হয়।

একইভাবে প্রজাতির উৎপত্তি বিষয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বেও থমকে দাঁড়ায় গোটা পৃথিবী। আদি সরল প্রাণ থেকে বিবর্তিত হয়ে হাজার হাজার প্রজাতির উৎপত্তি-এমন তত্ত্বকে ঘিরে শুরু হয় প্রশ্ন, বিতর্ক, বিরোধিতা। প্রশ্নবিদ্ধ হয় প্রকৃতি সম্পর্কে অপরিবর্তী ধারণারজগত। সেই বিতর্ক আর প্রতিযোগিতা আজও থামেনি। বাংলাদেশেও তার বাইরে নয়। এক সময় উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় জৈববিবর্তন সম্পর্কিত অধ্যায়টি। কিন্তু জৈববিবর্তন ছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, উন্নত জাতের ফসলের বীজ তৈরি, নতুন নতুন রোগের প্রতিষেধক তৈরিসহ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ কি পুরোপুরি সম্ভব? গত দেড়শ বছর ধরে জৈব বিবর্তনের চর্চাকে বাদ দিয়ে কি আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি পুরোপুরি অর্জন করা যেত? জীবের পরিবর্তনের নিয়মকে পাশ কাটিয়ে জীববিজ্ঞানের পরিপূর্ণ পাঠ কি সম্ভব। এম অনেক প্রশ্নের সমাধানের লক্ষ্যে মুক্তচিন্তা তথা জাগতিক বোধ বিকাশের জন্য ডারউইনবাদ অধ্যয়ন জরুরী।

আসুন আমরা ভেঙ্গে ফেলি সব নিরবতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা। অধ্যয়ন করি ডারউইনবাদ; বিকাশ ঘটাই মুক্তচিন্তা এবং দুইশত জন্মবার্ষিকী এবং তার প্রজাতির উৎপত্তি গ্রন্থের একশত পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্মরণ করি এই মহান মণিষীটিকে।

No comments

আমাদের ঠিকানা

রংপুর।, Bangladesh
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, টাউন হল চত্বর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭১৯৪৬৩৫৪১, ০৭১৪৬০৭০৬৩৪, ০১৭৩৮২৮০২০১। E-mail: muktochintabcp@gmail.com
Powered by Blogger.