Header Ads

Header ADS

ডাইনোসর- কেমন ছিল তাদের জীবন : মুহাম্মদ শাহ ফরিদ

১.
জীব জগতের সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভব ও বিলুুপ্তি ঘটেছে যা বিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। ভূ-তাত্তি্বক সময়পুঞ্জির দিকে তাকালে আমরা দেখাতে পাই একেকটি নির্দিষ্ট সময়ে একেকটি প্রজাতি প্রাণী পৃথিবীতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ঠিক তেমনি আজ থেকে প্রায় ২২০ মিলিয়ন বছর আগে মেসোজোয়িক এরার ট্রায়াসিক পিরিয়ডে আবির্ভূত হয়েছিল অতিকায় বৃহৎ ও ভয়ংকর এক ধরনের প্রজাতি প্রাণী। সরীসৃপ শ্রেণীর এই সকল প্রাণীরা এক সময় সারা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াতো। হঁ্যা ডাইনোসরের কথাই বলা হচ্ছে। ডাইনোসোররা ছিল উক্ত সময়ের সবচেয়ে সাফল্যমন্ডিত জীবকূল যারা কার্যকর ক্ষমতা সম্পন্ন প্রত্যেকটি পরিবেশগত চাহিদা পূরণ করেছিল। মেসোজোয়িক এরার ট্রায়াসিক, জুরাসিক ও ক্রেটাসাস যুগে পৃথিবী দেখেছিল এদের অদ্ভুত সব কর্মকান্ড শুনেছিল ভয়ংকর বজ্রধ্বনি। অসংখ্য প্রজাতির ডাইনোসরের আবির্ভাব ঘটেছিল পৃথিবীতে যাদের অনেকেই এখনো অনাবিস্কৃত। এ সম্পর্কে ডাইনোসর বিশেষজ্ঞ পেলসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ডডসন একটি তথ্য দিয়েছেন যা শুনলে আমাদের অবাক হতে হয়। তাঁর মতে কম করে হলেও ১৮৫০টি প্রজাতির অস্তিত্ব থাকার কথা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন মাত্র ৫২৭টি প্রজাতি সম্পর্কে। ডাইনোসর বিশেষজ্ঞগণ প্রোসরোপওস, সরোপওস ও থেরোপওস এই ডাইনোসরগুলোকে সরিশ্চিয়িান দলের অন্তর্ভুক্ত করেন। এদের কটিদেশ ছিল টিকটিকি সদৃশ। প্রোসরোপওসরা প্রথম উদ্ভিদভোজী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল প্রায় ২২ কোটি বছর আগে। এরা লম্বায় ছিল প্রায় ৬ মিটার। ঘাড় ছিল লম্বা মাথা ছোট। পিছনের দু'পা হাঁটার জন্য ব্যবহার করত।
সরোপডস ডাইনোসরের যাদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে ডিপলোডোকাস ও ব্রাকিওসরাস অন্যতম। এদের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ থেকে ৫ মিটার ও লম্বায় ছিল ৯ থেকে ২৭ মিটার। এদের ওজন ছিল প্রায় ৩০-৫০ মেট্রিক টন। জুরাসিক যুগে এরা উদ্ভিদভোজী হিসেবে বিচরণ করত। ডাইনোসরের জগতে সরোপডরাই ছিল অতিকায় দৈহিক আকৃতি সম্পন্ন। মেসোজোয়িক এরার শেষ দিকে স্থল ভাগে যে সকল ডাইনোসর প্রজাতি প্রভূত্ব কায়েম করেছিল তারা ছিল অত্যন্ত হিংস্র, মাংসাশী থেরোপত। টাইর্যানোসর এর উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ মিটার এবং লম্বায় ছিল প্রায় ১২মিটার। এদের দাঁত ছিল অত্যন্ত সুগঠিত। সামনের পায়ের তেমন ব্যবহার ছিল না। ডাইনোসর জীবাশ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে এরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে একই সময়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করত। তবে অ্যান্টোসরও টাইর্যানোসরা ছিল মাংসাশী। এদের খাদ্য তালিকায় তখনকার দিনের অনুন্নত স্তন্যপায়ীরাও ছিল। ডিমের জীবাশ্ম আবিষ্কার হওয়ার পর ডাইনোসরদের প্রজনন ও বৃদ্ধি সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। স্ত্রী ডাইনোসর বাসা তৈরী করত, ডিম পাড়ত কিন্তু ডিমে তা দিত পুরুষ ডাইনোসর। তাদের দেহের বর্ণবৈচিত্রময়তা বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করত। এক সময়ের পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো অতিকায় এই সকল প্রাণীদের আজ কেউ-ই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু কেন এরা টিকতে পারেনি? অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে কোন রহস্যময় শক্তির প্রভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল এক সময়ের সাফল্যমন্ডিত এই প্রাণীকূলকে? এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আজও দিতে পারেনি বিজ্ঞানী মহল। যে দু' একজন এ বিষয়ে কথা বলেছিল তাও অন্যান্যদের কাছে যুক্তির ধোপে টেকেনি। ডাইনোসর বিলুপ্তির কারণ হিসেকে যে সকল ধারণা বিজ্ঞানী মহলে প্রচলিত আছে তার মধ্যে মনে করা হয় যে, আজ থেতে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে মেঙ্েিকার ইয়ুকাটান উপদ্বীপে একটি বৃহত্তম ধুমকেতু আঘাত হেনেছিল। সে কারণেই হয়তো বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর। কিন্তু প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেলার বলেছেন অন্য কথা। তাঁর মতে ডাইনোসর বিলুপ্তির সময় আর ঐ ছিকসুলুব ক্রাটারের আঘাত হানার সময় এক নয়। মেঙ্েিকার ইয়ুকাটান উপদ্বীপে আঘাতকারী ছিকসুলুব ক্রাটার নয় বরং সম্ভবত এটি একটি অজানা আঘাতের ঘটনা। যেটি ঘটেছিল সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে ক্রিটোশিয়াম ও টেরিয়ায়ারী যুগের সংযোগকারী সময়পূর্বে যা ডাইনোসর বিলুপ্তির সময়ের সাথে সংগতিপূর্ণ। কেলার মনে করেন ডাইনোসরের অবলুপ্তি খুব সম্ভব উক্ত সময়ের পরিবেশগত বহুরকম উপাদানের বহুমুখী ভূমিকারই ফলাফল। উদাহরণ স্বরূপ তিনি দেখিয়েছেন; ক্রেটাশাস ও টেরিয়ারি যুগের সংযোগকারী সময় পর্বে পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরিগুলো ছিল ভয়ঙ্কর রকমের সক্রিয়। পৃথিবীর আবহাওয়া ছিল খুব গরম যা সেই সময়ের ইকোসিস্টেমের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাই তিনি মনে করেন ক্রেটাশাস ও টেরিয়ারী যুগের সংযোগকারী সময় পর্বে মহাশূন্য থেকে আসা ধুমকেতুর আঘাত ও আগ্নেয়গিরির তৎপরতা মিলে সৃষ্ঠ পরিবেশ ডাইনোসরের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের গুজরাটে পাওয়া গেছে ডাইনোসরের ডিম এবং একই স্থানে পাওয়া গেছে ইরিডিয়াম মৌল। এ থেকে ভারতের জিওলজিক্যাল সার্ভের আঞ্চলিক ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আর.এস. গোয়েল দাবি করেন, ইরিডিয়াম যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না। প্রকৃতিতে পাওয়া মৌলের প্রধান উৎস হচ্ছে উল্কা বৃষ্টি আর ডাইনোসরের ডিম ও ইরিডিয়াম এক সাথে পাওয়ার মানে হচ্ছে উল্কাবৃষ্টিই হতে পারে ডাইনোসর ধ্বংসের কারণ। বিজ্ঞানীরা জানান ঐ উল্কাবৃষ্টি স্বাভাবিক কোন উল্কাবৃষ্টি ছিল না। এর ফলে ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঝড়ে ওড়ে ধুলা যা সাধারণ কোন ধুলা ছিল না। ছিল বিষাক্ত ইরিডয়িাম। এই বিষাক্ত ধুলিকণা আবহাওয়া মন্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জমে সৃষ্টি হয়েছিল ধুলি মেঘ যা সূর্যের আলোকে পৃথিবীতে আসতে দেয়নি বহুদিন। এর ফলে মরতে শুরু করেছিল উদ্ভিদরাজি ও উদ্ভিদভোজী ডাইনোসর আর তাই মাংসাশী ডাইনোসরদের ধ্বংস ছিল তখন সময়ের ব্যাপার। ডাইনোসরদের বিলুপ্তি রহস্য উদঘাটনে চলছে ব্যাপক গবেষণা। হয়তো কোনদিন বের হয়ে আসবে সঠিক তথ্য। তখন ডাইনোসর বিলুপ্তির রহস্য আর রহস্য হয়ে থাকবে না হয়ে যাবে সবার জানা একটি বিষয়।

সূত্রঃ বিজ্ঞান চেতনা পাঠাগার, রংপুর।

No comments

আমাদের ঠিকানা

রংপুর।, Bangladesh
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, টাউন হল চত্বর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭১৯৪৬৩৫৪১, ০৭১৪৬০৭০৬৩৪, ০১৭৩৮২৮০২০১। E-mail: muktochintabcp@gmail.com
Powered by Blogger.