মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কী অবসান হচ্ছে? : রিচার্ড বি. ডিউক বফ
আমরা ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলতে এমন এক পরিস্থিতিকে বুঝি যখন একটা জাতিরাষ্ট্র বিশে¦র রাজনীতি ও অর্থনীতিকে রূপ দেয়া, নিয়ন্ত্রণ করা ও দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যাপারে প্রধানতম ভূমিকা নেয়। পেশীশক্তির প্রয়োগ সব সময়ই সাম্রাজ্যবাদের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত, কিন্ত্ত সেনাশক্তিকেও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়। আর অর্থনৈতিক অবস্থা অনুকূল না হলে কেমন ধরনের দূর্যোগ নেমে আসতে পারে তার উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটেনের (১৮৯৯-১৯০২) এবং ভিয়েতনামে আমেরিকার (১৯৬২-১৯৭৫) অবস্থার কথা চিন্তা করতে পারি। ব্রিটেন পৃথিবীকে ১৮১৫ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত শাসন করেছে কিন্ত্ত ১৮৯০ এর শেষে সে আমেরিকা ও জার্মানীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। দুই বিশ¦যুদ্ধের মাঝে পড়ে ব্রিটেনের পক্ষে আর বিশ¦কে অধিকার করে রাখা সম্ভব হলো না। আমেরিকার আধিপত্য দ্বিতীয় বিশ¦যুদ্ধের সময়ে শুরু হয় এবং ৩০ বছর পরে ডালপালা ছড়িয়ে মহীরুহে পরিণত হয়। এখনও আমেরিকা বিশে¦র অর্থনীতি ও রাজনীতিতে মহাশক্তিধর। কিন্ত্ত এই সুপার পাওয়ার পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনাকে প্রভাবিত ও আয়ত্বে আনার ব্যাপারে দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছে। আমেরিকার সেনাবাহিনীর ক্ষমতার সাথে এর অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির তাল মিলছে না এবং আমেরিকার পুঁজি সংকটাপন্ন। আমরা গত সংখ্যায় এ লেখাটির প্রথম অংশ প্রকাশ করেছি এবার ছাপান হল দ্বিতীয় অংশ।
১৯৭০ এর দশকে ইউএসএ-র অর্থনৈতিক প্রাধান্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে এবং পিছিয়ে পড়া শুরু করলে সে আরও বেশি যুদ্ধাংদেহী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করলো। ১৯৭৪ সালে বাণিজ্য ও শুল্ক আইনের ৩০১ ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট যিনি একই সাথে পরিচালক, বিচারক এবং জুরি, যে কোন জাতির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। যদি তারা অবমাননা করে Òযে কোন বাণিজ্য চুক্তি অধীনে আমেরিকার এ চেষ্টাকেÓ এবং যে কোন বিদেশি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শোধ নিতে পারবে যেটা Òঅপ্রমাণিত, অযৌক্তিক এবং বৈষম্য মূলক ... বোঝা চপিয়ে দিচ্ছে বা আমেরিকার বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেÓ তাদের নতুন বাণিজ্য অস্ত্রের মধ্যে একটা ছিল, নিয়মিত বাজারজাতকরণ চুক্তি যেটা দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং এবং তাইওয়ানের সাথে ১৯৭৩ সালে চালু হয় এবং তুলা, সিনথেটিক কাপড় আমেরিকায় পাঠানোর উপর Òস্বেচ্ছাসেবীÓ বাঁধায় তাদের ফেলা হয়। এরই ফলে ১৯৮১ সালে জাপান তার অটোমোবাইল র্তানী কমাতে রাজি হয়েছিল। ১৯৮২ সালে শুল্ক ও বাণিজ্য বিষয়ক সাধারণ সভা নতুন কিছু চক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ছাড়াই মূলতবী হয়েছিল। কারণ আমেরিকার প্রস্তাবের বিপক্ষে ইউরোপিয়ান প্রতিরোধ। আমেরিকা ঘোষণা করেছিল যে, তাদের বাণিজ্য বিস্তার এখন থেকে Òটু-ট্রাকÓ নীতিতে চলবে। আলাদা আলাদা দেশের সাথে দ্বি-পক্ষীয় চুক্তিসহ একই সাথে বহুপক্ষীয় চুক্তিও চলবে। উন্বুক্ত বাণিজ্য পদ্ধতি অর্জন করার জন্য। এই দ্বি-পক্ষীয়তার ফলে ১৯৮৪ সালে ক্যারিবীয় অববাহিকা জুড়ে বাণিজ্য সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তাদের সাথে। ইজরাইলের সাথে একবছর পরে কানাডা, আমেরিকা উন্বুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ১৯৮৮ সালে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ১৯৮৮ সালে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ১৯৮৮ সালে সাফটার সাহায্যে ‘আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’। ১৯৯০ সালে ৩০১ ধারার আওতায় আমেরিকা একশরও বেশি অনুসন্ধান চালিয়েছিল। এর ফলাফল ছিল মিশ্র রকমের। ৩০১ ধারার প্রধান উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা বলা যায় যে, ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী চুক্তি রক্ষা করছে আমেরিকার ভিতরে তার অটোমোবাইলস তৈরি করে। জাপানের তৈরি ১৩টি অটোমোবাইলেস উপর ১০০% শুল্ক আরোপিত হতে পারে বলেছিল। যদি না তারা অটো পার্টস বাজারকে বেসরকারীকরণ করে এবং প্রতিবছর হাজার হাজার আমেরিকার বানানো পার্টস আমদানি না করে। ক্লিনটন প্রশাসন জাপানের প্রতি ‘শঠতাপূর্ণ’ সমালোচনা স্বত্ত্বেও ১৯৯৫ সালের জুন মাসে তাদের ভিতরে একটা চুক্তি হয়েছিল। যখন পিটুনি কার প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। কোন নতুন শুল্ক অথবা কোটা বসানো হয়নি, বিনিময়ে জাপান ভূঁয়া আশ¦াস দিয়েছিল যে, পার্টস নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং আমেরিকার বানানো গাড়ি বিপনন করে এমন ডিলারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। ১৯৯৮ সালে আমেরিকা বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থার তিনটি বড় পরাজয়ের ফলে ধাক্কা খায়। ঐ বছরের জানুয়ারী মাসেই বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থার একটা প্যানেল মতামত জানায় যে, কোডাকের সাথে প্রতিযোগিতায় ফুজি ফ্লিমকে সহায়তা করে জাপান কোন বাণিজ্য বাধা তৈরি করেনি। সে বছরের মে মাসে অন্য একটা প্যানেল অভিযোগ করে যে, আমেরিকার জাল দিয়ে ধরা চিংড়ী আমদানি করার ফলে সামুদ্রিক কচ্ছপ মারা পড়ছে। জুন মাসে এক আপীল প্যানেল ইইউ কে কম্পিউটার এবং যন্ত্রাংশ কে শুল্ক থেকে রক্ষার জন্য টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি হিসেবে পুনর্বিন্যাস করতে সম্মতি দিয়ে ইইউ এর বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। আমেরিকা কলা এবং হরমোন দিয়ে বর্ধিত গরুর মাংসের কথা তুলে কলা-বিতর্ক শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। যখন ইউএস বিপননকারী ল্যাটিন আমেরিকান ফ্রুট (যেটা চিকুইতা ব্রান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ কার্ল লিন্ডার পরিচালনা করেন এবং যিনি ডেমোক্রাটিক এবং রিপাবলিকান দুদলকেই মোটা অংকের সহায়তা দেন) অভিযোগ করেন তারা ইউরোপীয়ান মার্কটে ঢুকতে পারছে না কারণ ইইউ এর কোটা ও লাইসেন্স এর ধরণ ক্যারিবীয় অঞ্চলের পূর্বতন কলোনী অঞ্চলগুলোর এবং আফ্রিকায় জন্বানো কলাকে সুবিধা দেয়। আমেরিকা ইইউ এর গরুর মাংস বৃদ্ধিতে হরমোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল। এই নিষেধ ইইউ নিজস্ব উৼপাদন ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। ১৯৯৯ এর এপ্রিলে বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থা পক্ষপাতমূলক রায় দিয়ে কলা-যুদ্ধে আমেরিকাকে জয়ী করে দেয়। ইইউ কে কোন ক্ষতিপূরণ ধরা হয়নি কিন্ত্ত ক্যারিবীয়ান এবং আফ্রিকান উৼপাদকদের অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্যকে কমিয়ে দিয়ে আমেরিকার জন্য মার্কেট বিস্তৃত করে দেয়। হরমোনের উপর ইউরোপীয়ান ব্যানকে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। কিন্ত্ত ইউএস এবং কানাডা ১২৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চায়। এই বিবাদ এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন প্রত্যাঘাত করলো। ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে ডব্লিউটিও-এর একটা প্যানেল রায় দেয় ১৯৭১ সালে পাশ করা ইউএসএ-এর বৈদেশিক বিক্রয় কর্পোরেশন অর্জনে (ঋঝঈ) অবৈধ র্তানি ভর্তুকিকে বৈধতা দিয়েছিল। বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থা আদেশ দেয় এ আইন বাতিল করতে হবে এবং এটা আমেরিকার এযাবৼকালের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পরাজয়। ঋঝঈ এর আওতায় প্রায় ৬০০ ইউএন কোম্পানী ৩০% বেশি র্তানী আয় রাষ্ট্রীয় কর থেকে রক্ষিত হচ্ছে। সেটা হচ্ছে বারমুডা ও বারবাডোজের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্য ভতু©কি গঠন করা। বোয়িং এবং জেনারেল ইলেকট্রিকের অংকের হিসেবে ১৯৯১ থেকে ২০০০ পর্যন্ত কর থেকে মুক্ত করা টাকার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার। ৩০০ বিলিয়ন ডলার মটোরোলা, হানিওয়েল, ক্যাটেলপিলার এবং সিসকোর জন্য। ২০০২ সালে সমস্ত কোম্পানীর জন্য বার্ষিক কর মওকুফের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৫ বিলিয়ন ডলারে। ইউএস বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট জুয়েলিক হুমকি দিয়েছিলেন অর্থ অনুদানের জন্য চাপ দেয় এবং তাকে যদি না দেয়া হয় তাহলে গোটা বাণিজ্য ব্যবস্থার উপর পরমাণু বোমা ফাটানো হবে বলে হুমকি দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও আগস্ট ২০০২ এ বাণিজ্য সংস্থা রায় দেয় যে, ইইউ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার চাইতে পারে। ডেইরী, মাংসজাত পণ্য, চিনি, খাদ্যশস্য, কাপড় ও যন্ত্রপাতিসহ ১৬০০ পণ্যের শুল্ক ১০০% পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। ইউরোপীয় নেতাদের আমেরিকার বিপক্ষে কাজ করার জন্য একটা ক্লাব আছে। তাড়াতাড়িই এরকম ক্লাব আরো হবে। একপাক্ষিকভাবে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিই বুশ ২০০২ সালের মার্চে ইউরোপ, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত প্রায় সবরকমের স্টিলের উপর ৩০% শুল্ক ধার্য করে। কোন একটা শিল্পকে রক্ষার জন্য শতাব্দীর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল এটা। এর ফলে ইইউ, জাপান, চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং ব্রাজিলের খুচরা বিক্রি সমস্যায় পড়েছিল এবং ইউএস এর বিভিন্ন কোম্পানী যাদের স্টিলের দরকার পড়তো তারা অভিযোগ করেছিল যে, তাদের প্রয়োজনীয় মানের স্টিল তারা পাচ্ছে না। চাপের মুখে ইউএসএ পিছাতে বাধ্য হল এবং ১৭৮টি স্টিল পণ্যকে মার্চ ২০০২ এর শুল্ক থেকে মুক্ত করে দিল। কিন্ত্ত শিঘ্রই কানাডা, ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং ইউক্রেন থেকে আমদানি করা ইস্পাত ঢালাই রডের আমদানির উপর ৩৬.৯% পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়ে দিল। জুলাই ২০০৩ সালে বাণিজ্য সংস্থা রায় দিল স্টিলের উপর চাপানো শুল্ক অবৈধ ছিল আমেরিকার আর একটা পরাজয়। কিন্ত্ত ইউএসএ নতুন করে কৃষিতে আক্রমণ শুরু করলো। স্টিলের ট্যারিফ চাপানোর ২ মাস পর প্রেসিডেন্ট বুশ আবার ভতু©কি বিলে সই করলেন। তাতে বর্তমানের তুলনায় ৮০% ব্যয় বাড়ানো হয় এবং দশ বছরের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন ইউএস ডলার হিসাব করা হয়। এর ফলে বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থা কৃষি ভতু©কি কমানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। শুধু ইউএসএ-এর জন্যই না, ইইউ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্যও। ২০০৩ সালের মে মাসে ইউএসএ, কানাডা এবং আর্জন্টিনার সাথে যুক্ত হয়ে ডব্লিউটিওতে অভিযোগ আনে যে, ইইউ ৫ বছর আগেকার পরিবর্তিত জিএম খাদ্যের নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের চাষীদের বায়োইঞ্জিনিয়ার্ড ভুট্টা ও সয়াবিন বিক্রি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের পক্ষে কোন উন্নয়নশীল দেশকে রাখা আমেরিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্ত্ত মিশর তাদের প্রধান ব্যবসায়ের অংশীদার। ইউরোপের চাপের কারণে বেরিয়ে গেল। এরপর বিক্ষুব্ধ আমেরিকা তড়িঘড়ি করে মিশরের সাথে একটা উন্বুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরিকল্পনা বাতিল করলো। ইউরোপিয়ানরা দেখালো যে, আমেরিকা ২০০১ সালে বায়োসেফটির জন্যে করা শত জাতীয় চুক্তিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল এবং ইইউ বর্তমানে জিএম খাবার বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে কিন্ত্ত এই বিবৃতির কোন জবাব না দিয়েই প্রেসিডেন্ট বুশ ইউরোপকে দোষারপ করেন যে, তারা আফ্রিকার ধার শোধ করার পথ চিরতরে বন্ধ করছে। সব বাজারের ধাত্রী বোয়িং বনাম এয়ারবাসের উপর দীর্ঘসস্থায়ী যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭০ সালে ইউরোপীয় চার জাতি প্রতিষ্ঠান বানানো হয়। বোয়িংয়ের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে এয়ার বাস ইন্ড্রাস্ট্রি (অখ) গতি হয়েছিল। সরকারী ভতু©কি ও লোনের উপর ভিত্তি করে। ইউএসএ-কে প্রতিপদক্ষেপে এটার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এয়ারবাস ইন্ড্রাস্ট্রি বলেছিল যে, বোয়িং নানারকম সরকারী সাহায্য নিয়ে লাভবান হয়েছিল। ইউএস মিলিটারির জন্য বিমান বানিয়ে এবং ডিজাইন করে। ১৯৯২ সালে এমন এক সময়ে এয়ারবাসকে ভতু©কি এবং সুরক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল যখন সারাবিশে¦র নতুন বিমান তৈরির ৩০% অর্ডার পেয়েছিল তারা। তাদের জন্য এটা একটা বড় বিজয়। এতে আমেরিকানরা আটলান্টিক জুড়ে বাণিজ্যের বিস্তার নিয়ে সমস্যায় পড়ে। আমেরিকার কিছু কিছু শিল্প যেমন- জেনারেল ইলেকট্রিকের মতো ইঞ্জিন প্রস্ত্ততকারী এবং এয়ারলাইন্স কোম্পানীদের স্বার্থরক্ষার জন্য জরুরী ছিল এএল-এর সাফল্য লকহেড মার্টিন এএল এর পঞ্চম অংশীদার হিসাবে ফ্রান্সের এয়ারবাস কেটিএল মার্টা এর সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিল। এএল এর সাথে যুক্ত একটা ফার্ম ১৯৯৭ এর মধ্যে বোয়িং ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে ২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বিমান সাপ্লাই দিয়ে ৬০,০০০ চাকুরীর সুযোগ তৈরি করে ইউরোপ এবং এএল এর ৩০% বিমান হয় আমেরিকান কোম্পানী অথবা তাদের ইউরোপীয়ান অংশীদার তৈরি করেছিল। ২০০১ সালে বাণিজ্যিক জেট প্লেনের অর্ডার বোয়িং এর সমান্তরালে চলে এসেছিল এএল। ২ বছর পরে ডেলিভারীতে আরো এগিয়ে যায় এবং ৭টি ইউরোপীয়ান দেশের জন্য ১৪৪টি ট্রান্সপোর্ট বিমান বানানোর জন্য এযাবৼকালের সবচেয়ে বড় মিলিটারী চুক্তি করে। এএল এখন সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বিমান প্রস্ত্ততকারক। ইইউ এর যোগাযোগ কমিশনার লয়লা ডি প্যালাসিভ বলেন যে, আরেকটা আমেরিকান একচেটিয়া দশ বছরের পুরোনো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (এচঝ) জিপিএস এখন চ্যালেঞ্জের সামনে। জিপিএস একটা স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম। যেটা ইউএস প্রতিরক্ষা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত এবং আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত। এর কাজ হলো পৃথিবীর যে কোন জায়গার পজিশনিং, বাতাশের গতিবেগ এবং সময় সম্পর্কে তথ্যের রিসিভারে জন্য গাণিতিক সংকেত পাঠানো। এটা যদিও তৈরি হয়েছিল ইউএস সেনাবাহিনীর জন্য কিন্ত্ত এখন এটা হাজার হাজার কর্পোরেট এবং ব্যক্তি ব্যবহারকারীদেরও সেবা দিচ্ছে। ২০০০ সালে ইইউ তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম Òগ্যালিলিওÓ চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা দেয় যে, এটা একটা সিভিল পরিচালিত প্রোগ্রাম। এর ফলে জিপিএস এর উপরে তাদের নির্ভরশীলতা তারা ঝেড়ে ফেলতে পারছে না এবং এটা সব রকম আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশ হতে যাচ্ছে। আমেরিকা এই প্রজেক্টকেও বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ২০০১ সালে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের উপসচিব পল উলফোউইৼজ সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, গ্যালিলিও জিপিএস এর কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে (যদিও সুসামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই এটি পরিকল্পিত) এবং এটা ন্যাটো মৈত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বা সমস্যায় ফেলতে পারে। বুশ প্রসাশনের একটা রিপোর্ট তৈরি করে দিয়েছিল প্রাইমওয়াটারহাউসকুপারস নামক একাউন্টিং ফার্ম। তারা বলেছিল যে, গ্যালিলিও ৮ বিলিয়ন (ইউরো) বছরে লাভ করতে পারবে এবং ১,৪০,০০০ নতুন চাকুরির সুযোগ তৈরি করতে পারবে। ২০০২ এর মার্চে ইইউ ঘোষণা করে যে, গ্যালিলিও ৩.৬ বিলিয়ন ইউরো ২০০৮ সাল নাগাদ এটা চালুযোগ্য হবে একমিটারের মধ্যে ভূমি এবং সামুদ্রিক ট্রাফিক বিষয়ে তথ্য স্বার্থকতার সাথে প্রচার করতে পারছে। এয়ারবাস এবং গ্যালিলিও ছড়িয়ে পড়ল আরেকটা প্রতিযোগিতা মূলক বাণিজ্যক্ষেত্র কর্পোরেট এমএন্ডএমএসএ। ইইউ জাতীয়তাবাদ দিয়েই যেসব মার্জারদের তাদের মার্কেট বিস্তারের সম্ভাবনা আছে তাদের পর্যালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মার্জার কন্ট্রোল রেজু¨লেশনের প্রধান (ক্যারেল ইয়ান মায়ার্ট) ১৯৯৭ সালে ইউএস কোম্পানী বোয়িং এবং ম্যাকডোনাল্ড ডলাসের সাথের মার্জারগুলোকে ব্লক করে দেয়। বোয়িং এর সাথে বিশ বছর মেয়াদী যে সাপ্লায়ার চুক্তি ছিল ডেল্টা কন্টিনেন্টাল এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সাথে সে চুক্তি রক্ষা করলো কয়েকটা ইইউ প্রয়োজনের স্বার্থে আত্বসমর্পন করে। ১৯৯৮ সালে ইয়ান মায়ার্ট দুটি এয়ারলাইন্স ফার্ম ‘আর্নেস্ট এন্ড ইয়াং’ এবং এমপিজি পিট মারউইয়ক এর মার্জার কঠিন করার পরিকল্পনার কথা বলেন এক মাস পরেই আন্টে©স্ট এন্ড ইয়াং তাদের চুক্তি প্রত্যাখান করেন। ২০০০ সালের ইইউ এর কমপিটিশন কমিশান ইউএস এর দুটো বড় চুক্তি বন্ধ করে (ওয়ার্ল্ড কাম ও স্প্রটির মার্জার এবং জেনারেল ইলেকট্রিকের হানিওয়েল এর দায়িত্ব গ্রহণ)। একই সাথে সুইডিশ ট্রাক প্রস্ত্ততকারী স্কানিয়া ও ভলভোর মার্জারও বন্ধ করে। ২০০১ সালে মাইক্রোসফট এর বিরুদ্ধে এন্টিট্রাস্ট মামলা আনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমপিটিশন কমিশন এবং ক্ষতিপূরণ চায়। কিন্ত্ত বুশ প্রশাসন ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াই এই মামলা নিষ্পত্তি করার পর ইইউসিসি বলে যে, এই সফটওয়্যার দানব একচেটিয়া উইন্ডোজ সিস্টেম কয়েকটি সফটওয়্যার এর সাথে গান ভিডিও এবং ইন্স্¨ন্ট¨ন্ট ম্যাসেজিং সফটওয়্যার জুড়ে দিয়ে অবৈধ কর্তৃত্ব করছে। বাজারে এর বিরুদ্ধে তারা তাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে। আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ১৯৭০ সালে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবার আগ পর্যন্ত ভালো ছিল। ১৯৮০ র দিকে আগের সময়ের চেয়ে ১০% পিছিয়ে যায়। আমেরিকা তাদের সাথে যুক্ত ইউরোপীয় স্বার্থে সোভিয়েট থেকে পশ্চিম জার্মানী পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইনের জন্য টারবাইন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি র্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ব্রিটেন স্বার্থকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা বিরোধী পক্ষকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালে আমেরিকার যেসব ফার্ম কিউবাতে ব্যবসা করেছে কিংবা ইরান ও লিবিয়ার এনার্জি খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করণের কড়াকড়ি শিথিল করে দেয়। বিনিময়ে ইইউ রাজি হয়েছিল ইরান ও লিবিয়ার অস্ত্র প্রযুক্তি র্তানি কমিয়ে দিতে। কারণ, ইউএসএ-এর বিভিন্ন কোম্পানী তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বলেছিল যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঐ সব দেশ থেকে প্রচুর মুনাফা কামিয়ে নিচ্ছে। অনুবাদঃ মৌসুমী জাহান
১৯৭০ এর দশকে ইউএসএ-র অর্থনৈতিক প্রাধান্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে এবং পিছিয়ে পড়া শুরু করলে সে আরও বেশি যুদ্ধাংদেহী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করলো। ১৯৭৪ সালে বাণিজ্য ও শুল্ক আইনের ৩০১ ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট যিনি একই সাথে পরিচালক, বিচারক এবং জুরি, যে কোন জাতির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। যদি তারা অবমাননা করে Òযে কোন বাণিজ্য চুক্তি অধীনে আমেরিকার এ চেষ্টাকেÓ এবং যে কোন বিদেশি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শোধ নিতে পারবে যেটা Òঅপ্রমাণিত, অযৌক্তিক এবং বৈষম্য মূলক ... বোঝা চপিয়ে দিচ্ছে বা আমেরিকার বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেÓ তাদের নতুন বাণিজ্য অস্ত্রের মধ্যে একটা ছিল, নিয়মিত বাজারজাতকরণ চুক্তি যেটা দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং এবং তাইওয়ানের সাথে ১৯৭৩ সালে চালু হয় এবং তুলা, সিনথেটিক কাপড় আমেরিকায় পাঠানোর উপর Òস্বেচ্ছাসেবীÓ বাঁধায় তাদের ফেলা হয়। এরই ফলে ১৯৮১ সালে জাপান তার অটোমোবাইল র্তানী কমাতে রাজি হয়েছিল। ১৯৮২ সালে শুল্ক ও বাণিজ্য বিষয়ক সাধারণ সভা নতুন কিছু চক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ছাড়াই মূলতবী হয়েছিল। কারণ আমেরিকার প্রস্তাবের বিপক্ষে ইউরোপিয়ান প্রতিরোধ। আমেরিকা ঘোষণা করেছিল যে, তাদের বাণিজ্য বিস্তার এখন থেকে Òটু-ট্রাকÓ নীতিতে চলবে। আলাদা আলাদা দেশের সাথে দ্বি-পক্ষীয় চুক্তিসহ একই সাথে বহুপক্ষীয় চুক্তিও চলবে। উন্বুক্ত বাণিজ্য পদ্ধতি অর্জন করার জন্য। এই দ্বি-পক্ষীয়তার ফলে ১৯৮৪ সালে ক্যারিবীয় অববাহিকা জুড়ে বাণিজ্য সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তাদের সাথে। ইজরাইলের সাথে একবছর পরে কানাডা, আমেরিকা উন্বুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ১৯৮৮ সালে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ১৯৮৮ সালে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ১৯৮৮ সালে সাফটার সাহায্যে ‘আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’। ১৯৯০ সালে ৩০১ ধারার আওতায় আমেরিকা একশরও বেশি অনুসন্ধান চালিয়েছিল। এর ফলাফল ছিল মিশ্র রকমের। ৩০১ ধারার প্রধান উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা বলা যায় যে, ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী চুক্তি রক্ষা করছে আমেরিকার ভিতরে তার অটোমোবাইলস তৈরি করে। জাপানের তৈরি ১৩টি অটোমোবাইলেস উপর ১০০% শুল্ক আরোপিত হতে পারে বলেছিল। যদি না তারা অটো পার্টস বাজারকে বেসরকারীকরণ করে এবং প্রতিবছর হাজার হাজার আমেরিকার বানানো পার্টস আমদানি না করে। ক্লিনটন প্রশাসন জাপানের প্রতি ‘শঠতাপূর্ণ’ সমালোচনা স্বত্ত্বেও ১৯৯৫ সালের জুন মাসে তাদের ভিতরে একটা চুক্তি হয়েছিল। যখন পিটুনি কার প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। কোন নতুন শুল্ক অথবা কোটা বসানো হয়নি, বিনিময়ে জাপান ভূঁয়া আশ¦াস দিয়েছিল যে, পার্টস নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং আমেরিকার বানানো গাড়ি বিপনন করে এমন ডিলারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। ১৯৯৮ সালে আমেরিকা বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থার তিনটি বড় পরাজয়ের ফলে ধাক্কা খায়। ঐ বছরের জানুয়ারী মাসেই বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থার একটা প্যানেল মতামত জানায় যে, কোডাকের সাথে প্রতিযোগিতায় ফুজি ফ্লিমকে সহায়তা করে জাপান কোন বাণিজ্য বাধা তৈরি করেনি। সে বছরের মে মাসে অন্য একটা প্যানেল অভিযোগ করে যে, আমেরিকার জাল দিয়ে ধরা চিংড়ী আমদানি করার ফলে সামুদ্রিক কচ্ছপ মারা পড়ছে। জুন মাসে এক আপীল প্যানেল ইইউ কে কম্পিউটার এবং যন্ত্রাংশ কে শুল্ক থেকে রক্ষার জন্য টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি হিসেবে পুনর্বিন্যাস করতে সম্মতি দিয়ে ইইউ এর বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। আমেরিকা কলা এবং হরমোন দিয়ে বর্ধিত গরুর মাংসের কথা তুলে কলা-বিতর্ক শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। যখন ইউএস বিপননকারী ল্যাটিন আমেরিকান ফ্রুট (যেটা চিকুইতা ব্রান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ কার্ল লিন্ডার পরিচালনা করেন এবং যিনি ডেমোক্রাটিক এবং রিপাবলিকান দুদলকেই মোটা অংকের সহায়তা দেন) অভিযোগ করেন তারা ইউরোপীয়ান মার্কটে ঢুকতে পারছে না কারণ ইইউ এর কোটা ও লাইসেন্স এর ধরণ ক্যারিবীয় অঞ্চলের পূর্বতন কলোনী অঞ্চলগুলোর এবং আফ্রিকায় জন্বানো কলাকে সুবিধা দেয়। আমেরিকা ইইউ এর গরুর মাংস বৃদ্ধিতে হরমোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল। এই নিষেধ ইইউ নিজস্ব উৼপাদন ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। ১৯৯৯ এর এপ্রিলে বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থা পক্ষপাতমূলক রায় দিয়ে কলা-যুদ্ধে আমেরিকাকে জয়ী করে দেয়। ইইউ কে কোন ক্ষতিপূরণ ধরা হয়নি কিন্ত্ত ক্যারিবীয়ান এবং আফ্রিকান উৼপাদকদের অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্যকে কমিয়ে দিয়ে আমেরিকার জন্য মার্কেট বিস্তৃত করে দেয়। হরমোনের উপর ইউরোপীয়ান ব্যানকে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। কিন্ত্ত ইউএস এবং কানাডা ১২৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চায়। এই বিবাদ এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন প্রত্যাঘাত করলো। ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে ডব্লিউটিও-এর একটা প্যানেল রায় দেয় ১৯৭১ সালে পাশ করা ইউএসএ-এর বৈদেশিক বিক্রয় কর্পোরেশন অর্জনে (ঋঝঈ) অবৈধ র্তানি ভর্তুকিকে বৈধতা দিয়েছিল। বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থা আদেশ দেয় এ আইন বাতিল করতে হবে এবং এটা আমেরিকার এযাবৼকালের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পরাজয়। ঋঝঈ এর আওতায় প্রায় ৬০০ ইউএন কোম্পানী ৩০% বেশি র্তানী আয় রাষ্ট্রীয় কর থেকে রক্ষিত হচ্ছে। সেটা হচ্ছে বারমুডা ও বারবাডোজের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্য ভতু©কি গঠন করা। বোয়িং এবং জেনারেল ইলেকট্রিকের অংকের হিসেবে ১৯৯১ থেকে ২০০০ পর্যন্ত কর থেকে মুক্ত করা টাকার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার। ৩০০ বিলিয়ন ডলার মটোরোলা, হানিওয়েল, ক্যাটেলপিলার এবং সিসকোর জন্য। ২০০২ সালে সমস্ত কোম্পানীর জন্য বার্ষিক কর মওকুফের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৫ বিলিয়ন ডলারে। ইউএস বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট জুয়েলিক হুমকি দিয়েছিলেন অর্থ অনুদানের জন্য চাপ দেয় এবং তাকে যদি না দেয়া হয় তাহলে গোটা বাণিজ্য ব্যবস্থার উপর পরমাণু বোমা ফাটানো হবে বলে হুমকি দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও আগস্ট ২০০২ এ বাণিজ্য সংস্থা রায় দেয় যে, ইইউ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার চাইতে পারে। ডেইরী, মাংসজাত পণ্য, চিনি, খাদ্যশস্য, কাপড় ও যন্ত্রপাতিসহ ১৬০০ পণ্যের শুল্ক ১০০% পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। ইউরোপীয় নেতাদের আমেরিকার বিপক্ষে কাজ করার জন্য একটা ক্লাব আছে। তাড়াতাড়িই এরকম ক্লাব আরো হবে। একপাক্ষিকভাবে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিই বুশ ২০০২ সালের মার্চে ইউরোপ, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত প্রায় সবরকমের স্টিলের উপর ৩০% শুল্ক ধার্য করে। কোন একটা শিল্পকে রক্ষার জন্য শতাব্দীর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল এটা। এর ফলে ইইউ, জাপান, চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং ব্রাজিলের খুচরা বিক্রি সমস্যায় পড়েছিল এবং ইউএস এর বিভিন্ন কোম্পানী যাদের স্টিলের দরকার পড়তো তারা অভিযোগ করেছিল যে, তাদের প্রয়োজনীয় মানের স্টিল তারা পাচ্ছে না। চাপের মুখে ইউএসএ পিছাতে বাধ্য হল এবং ১৭৮টি স্টিল পণ্যকে মার্চ ২০০২ এর শুল্ক থেকে মুক্ত করে দিল। কিন্ত্ত শিঘ্রই কানাডা, ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং ইউক্রেন থেকে আমদানি করা ইস্পাত ঢালাই রডের আমদানির উপর ৩৬.৯% পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়ে দিল। জুলাই ২০০৩ সালে বাণিজ্য সংস্থা রায় দিল স্টিলের উপর চাপানো শুল্ক অবৈধ ছিল আমেরিকার আর একটা পরাজয়। কিন্ত্ত ইউএসএ নতুন করে কৃষিতে আক্রমণ শুরু করলো। স্টিলের ট্যারিফ চাপানোর ২ মাস পর প্রেসিডেন্ট বুশ আবার ভতু©কি বিলে সই করলেন। তাতে বর্তমানের তুলনায় ৮০% ব্যয় বাড়ানো হয় এবং দশ বছরের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন ইউএস ডলার হিসাব করা হয়। এর ফলে বিশ¦ বাণিজ্য সংস্থা কৃষি ভতু©কি কমানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। শুধু ইউএসএ-এর জন্যই না, ইইউ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্যও। ২০০৩ সালের মে মাসে ইউএসএ, কানাডা এবং আর্জন্টিনার সাথে যুক্ত হয়ে ডব্লিউটিওতে অভিযোগ আনে যে, ইইউ ৫ বছর আগেকার পরিবর্তিত জিএম খাদ্যের নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের চাষীদের বায়োইঞ্জিনিয়ার্ড ভুট্টা ও সয়াবিন বিক্রি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের পক্ষে কোন উন্নয়নশীল দেশকে রাখা আমেরিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্ত্ত মিশর তাদের প্রধান ব্যবসায়ের অংশীদার। ইউরোপের চাপের কারণে বেরিয়ে গেল। এরপর বিক্ষুব্ধ আমেরিকা তড়িঘড়ি করে মিশরের সাথে একটা উন্বুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরিকল্পনা বাতিল করলো। ইউরোপিয়ানরা দেখালো যে, আমেরিকা ২০০১ সালে বায়োসেফটির জন্যে করা শত জাতীয় চুক্তিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল এবং ইইউ বর্তমানে জিএম খাবার বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে কিন্ত্ত এই বিবৃতির কোন জবাব না দিয়েই প্রেসিডেন্ট বুশ ইউরোপকে দোষারপ করেন যে, তারা আফ্রিকার ধার শোধ করার পথ চিরতরে বন্ধ করছে। সব বাজারের ধাত্রী বোয়িং বনাম এয়ারবাসের উপর দীর্ঘসস্থায়ী যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭০ সালে ইউরোপীয় চার জাতি প্রতিষ্ঠান বানানো হয়। বোয়িংয়ের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে এয়ার বাস ইন্ড্রাস্ট্রি (অখ) গতি হয়েছিল। সরকারী ভতু©কি ও লোনের উপর ভিত্তি করে। ইউএসএ-কে প্রতিপদক্ষেপে এটার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এয়ারবাস ইন্ড্রাস্ট্রি বলেছিল যে, বোয়িং নানারকম সরকারী সাহায্য নিয়ে লাভবান হয়েছিল। ইউএস মিলিটারির জন্য বিমান বানিয়ে এবং ডিজাইন করে। ১৯৯২ সালে এমন এক সময়ে এয়ারবাসকে ভতু©কি এবং সুরক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল যখন সারাবিশে¦র নতুন বিমান তৈরির ৩০% অর্ডার পেয়েছিল তারা। তাদের জন্য এটা একটা বড় বিজয়। এতে আমেরিকানরা আটলান্টিক জুড়ে বাণিজ্যের বিস্তার নিয়ে সমস্যায় পড়ে। আমেরিকার কিছু কিছু শিল্প যেমন- জেনারেল ইলেকট্রিকের মতো ইঞ্জিন প্রস্ত্ততকারী এবং এয়ারলাইন্স কোম্পানীদের স্বার্থরক্ষার জন্য জরুরী ছিল এএল-এর সাফল্য লকহেড মার্টিন এএল এর পঞ্চম অংশীদার হিসাবে ফ্রান্সের এয়ারবাস কেটিএল মার্টা এর সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিল। এএল এর সাথে যুক্ত একটা ফার্ম ১৯৯৭ এর মধ্যে বোয়িং ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে ২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বিমান সাপ্লাই দিয়ে ৬০,০০০ চাকুরীর সুযোগ তৈরি করে ইউরোপ এবং এএল এর ৩০% বিমান হয় আমেরিকান কোম্পানী অথবা তাদের ইউরোপীয়ান অংশীদার তৈরি করেছিল। ২০০১ সালে বাণিজ্যিক জেট প্লেনের অর্ডার বোয়িং এর সমান্তরালে চলে এসেছিল এএল। ২ বছর পরে ডেলিভারীতে আরো এগিয়ে যায় এবং ৭টি ইউরোপীয়ান দেশের জন্য ১৪৪টি ট্রান্সপোর্ট বিমান বানানোর জন্য এযাবৼকালের সবচেয়ে বড় মিলিটারী চুক্তি করে। এএল এখন সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বিমান প্রস্ত্ততকারক। ইইউ এর যোগাযোগ কমিশনার লয়লা ডি প্যালাসিভ বলেন যে, আরেকটা আমেরিকান একচেটিয়া দশ বছরের পুরোনো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (এচঝ) জিপিএস এখন চ্যালেঞ্জের সামনে। জিপিএস একটা স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম। যেটা ইউএস প্রতিরক্ষা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত এবং আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত। এর কাজ হলো পৃথিবীর যে কোন জায়গার পজিশনিং, বাতাশের গতিবেগ এবং সময় সম্পর্কে তথ্যের রিসিভারে জন্য গাণিতিক সংকেত পাঠানো। এটা যদিও তৈরি হয়েছিল ইউএস সেনাবাহিনীর জন্য কিন্ত্ত এখন এটা হাজার হাজার কর্পোরেট এবং ব্যক্তি ব্যবহারকারীদেরও সেবা দিচ্ছে। ২০০০ সালে ইইউ তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম Òগ্যালিলিওÓ চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা দেয় যে, এটা একটা সিভিল পরিচালিত প্রোগ্রাম। এর ফলে জিপিএস এর উপরে তাদের নির্ভরশীলতা তারা ঝেড়ে ফেলতে পারছে না এবং এটা সব রকম আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশ হতে যাচ্ছে। আমেরিকা এই প্রজেক্টকেও বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ২০০১ সালে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের উপসচিব পল উলফোউইৼজ সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, গ্যালিলিও জিপিএস এর কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে (যদিও সুসামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই এটি পরিকল্পিত) এবং এটা ন্যাটো মৈত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বা সমস্যায় ফেলতে পারে। বুশ প্রসাশনের একটা রিপোর্ট তৈরি করে দিয়েছিল প্রাইমওয়াটারহাউসকুপারস নামক একাউন্টিং ফার্ম। তারা বলেছিল যে, গ্যালিলিও ৮ বিলিয়ন (ইউরো) বছরে লাভ করতে পারবে এবং ১,৪০,০০০ নতুন চাকুরির সুযোগ তৈরি করতে পারবে। ২০০২ এর মার্চে ইইউ ঘোষণা করে যে, গ্যালিলিও ৩.৬ বিলিয়ন ইউরো ২০০৮ সাল নাগাদ এটা চালুযোগ্য হবে একমিটারের মধ্যে ভূমি এবং সামুদ্রিক ট্রাফিক বিষয়ে তথ্য স্বার্থকতার সাথে প্রচার করতে পারছে। এয়ারবাস এবং গ্যালিলিও ছড়িয়ে পড়ল আরেকটা প্রতিযোগিতা মূলক বাণিজ্যক্ষেত্র কর্পোরেট এমএন্ডএমএসএ। ইইউ জাতীয়তাবাদ দিয়েই যেসব মার্জারদের তাদের মার্কেট বিস্তারের সম্ভাবনা আছে তাদের পর্যালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মার্জার কন্ট্রোল রেজু¨লেশনের প্রধান (ক্যারেল ইয়ান মায়ার্ট) ১৯৯৭ সালে ইউএস কোম্পানী বোয়িং এবং ম্যাকডোনাল্ড ডলাসের সাথের মার্জারগুলোকে ব্লক করে দেয়। বোয়িং এর সাথে বিশ বছর মেয়াদী যে সাপ্লায়ার চুক্তি ছিল ডেল্টা কন্টিনেন্টাল এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সাথে সে চুক্তি রক্ষা করলো কয়েকটা ইইউ প্রয়োজনের স্বার্থে আত্বসমর্পন করে। ১৯৯৮ সালে ইয়ান মায়ার্ট দুটি এয়ারলাইন্স ফার্ম ‘আর্নেস্ট এন্ড ইয়াং’ এবং এমপিজি পিট মারউইয়ক এর মার্জার কঠিন করার পরিকল্পনার কথা বলেন এক মাস পরেই আন্টে©স্ট এন্ড ইয়াং তাদের চুক্তি প্রত্যাখান করেন। ২০০০ সালের ইইউ এর কমপিটিশন কমিশান ইউএস এর দুটো বড় চুক্তি বন্ধ করে (ওয়ার্ল্ড কাম ও স্প্রটির মার্জার এবং জেনারেল ইলেকট্রিকের হানিওয়েল এর দায়িত্ব গ্রহণ)। একই সাথে সুইডিশ ট্রাক প্রস্ত্ততকারী স্কানিয়া ও ভলভোর মার্জারও বন্ধ করে। ২০০১ সালে মাইক্রোসফট এর বিরুদ্ধে এন্টিট্রাস্ট মামলা আনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমপিটিশন কমিশন এবং ক্ষতিপূরণ চায়। কিন্ত্ত বুশ প্রশাসন ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াই এই মামলা নিষ্পত্তি করার পর ইইউসিসি বলে যে, এই সফটওয়্যার দানব একচেটিয়া উইন্ডোজ সিস্টেম কয়েকটি সফটওয়্যার এর সাথে গান ভিডিও এবং ইন্স্¨ন্ট¨ন্ট ম্যাসেজিং সফটওয়্যার জুড়ে দিয়ে অবৈধ কর্তৃত্ব করছে। বাজারে এর বিরুদ্ধে তারা তাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে। আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ১৯৭০ সালে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবার আগ পর্যন্ত ভালো ছিল। ১৯৮০ র দিকে আগের সময়ের চেয়ে ১০% পিছিয়ে যায়। আমেরিকা তাদের সাথে যুক্ত ইউরোপীয় স্বার্থে সোভিয়েট থেকে পশ্চিম জার্মানী পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইনের জন্য টারবাইন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি র্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ব্রিটেন স্বার্থকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা বিরোধী পক্ষকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালে আমেরিকার যেসব ফার্ম কিউবাতে ব্যবসা করেছে কিংবা ইরান ও লিবিয়ার এনার্জি খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করণের কড়াকড়ি শিথিল করে দেয়। বিনিময়ে ইইউ রাজি হয়েছিল ইরান ও লিবিয়ার অস্ত্র প্রযুক্তি র্তানি কমিয়ে দিতে। কারণ, ইউএসএ-এর বিভিন্ন কোম্পানী তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বলেছিল যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঐ সব দেশ থেকে প্রচুর মুনাফা কামিয়ে নিচ্ছে। অনুবাদঃ মৌসুমী জাহান
No comments