"আমাদের মূল মনোযোগটা হচ্ছে জনগণের শক্তি তৈরি করা, জনগণের গণরায় তৈরি করা। সেই চেতনা তৈরি করা যা অনেক রকম বিভ্রান্তি বা মিথ্যাচারের মধ্য থেকে জনগণকে রক্ষা করবে।" - আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সম্পাদক ও জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদু্যৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব। সমপ্রতি ২৪-৩০ অক্টোবর ঢাকা-ফুলবাড়ি লংমার্চের সমাপনী দিনে আমরা 'মুক্তচিন্তা'র পক্ষে এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করি। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ কারমাইকেল কলেজ, শাখার কর্মী রায়হান কবীর, স্বপন বর্মন, অমরেশ কুমার (সোহাগ) এবং শাহ্ ফরিদ।
মুক্তচিন্তাঃ গত ঢাকা-বিবিয়ানা লংমার্চের মধ্য দিয়ে ভারতে গ্যাস পাচার আপনারা প্রতিরোধ করেছিলেন, এবারের ঢাকা-ফুলবাড়ি লংমার্চের মাধ্যমে কতটা সফল হবেন বলে মনে করেন?
আনু মুহাম্মদ ঃ আমরা যখন থেকে আন্দোলন করছি তখন থেকেই অনেকে বলে যে, এসব লংমার্চ করে কি হবে? এসব আন্দোলন করে কি হবে? কিন্তু আমরা দেখেছি যেহেতু এই আন্দোলনের মধ্যে ন্যায্যতা আছে, যেহেতু এই আন্দোলনে জনগণের ব্যাপক সমর্থন আছে, যেহেতু এই আন্দোলন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে, যেহেতু আমরা এই আন্দোলনে প্রত্যেকবারেই সাফল্য পেয়েছি, সাফল্যটা পূর্ণ সাফল্য বলা যায় না। পূর্ণ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের মালিকানা বা ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের হাতে আসতে হবে। কিন্তু খন্ড খন্ড সাফল্য আমরা প্রত্যেকবারেই পেয়েছি, যেমন- বিবিয়ানা লংমার্চের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিবিয়ানার গ্যাস ভারতে রপ্তানির যে চক্রান্ত হয়েছিল সেটাকে আমরা প্রতিহত করেছি।
চট্টগ্রাম বন্দর যে লংমার্চ সেটার মধ্য দিয়ে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর এক মার্কিন ভূয়া কোম্পানীর হাতে দিয়ে দেওয়ার হাত থেকে প্রতিহত করেছি। মংলা বন্দরের যে লংমার্চ এই লংমার্চের মধ্য দিয়ে, গ্যাস এবং জ্বালানী সম্পদের ক্ষেত্রে তাদের নতুন নতুন চুক্তি করার বিরুদ্ধে জাতীয় জনমত তৈরি হয়েছে। টাটার বিরুদ্ধে আমরা যে আন্দোলন করেছিলাম সে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে টাটার অনেকগুলো ভয়ঙ্কর প্রকল্প তারা আর চালু করতে পারেনি। ফুলবাড়ীতে এবার যে লংমার্চ হলো তার আগে একটা রোডমার্চ হয়েছিল। রোডমার্চ আসলে লংমার্চেরই ছোট সেটা হলো ২০০৬ সালের মার্চ মাসে। সেই রোডমার্চের মধ্য দিয়ে জাতীয় কমিটি এই অঞ্চলের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সেটারই ধারাবাহিকতায় এশিয়া এনার্জি ঘেরাও কর্মসূচী, জনগণের অভূ্যত্থান এবং ফুলবাড়ী চুক্তি। সুতরাং প্রত্যেকটা পর্যায়েই যেহেতু জনগণের ব্যাপক সমর্থন আছে, অংশগ্রহণ আছে এবং তার মধ্যে ন্যায্যতা আছে সেহেতু আমরা প্রত্যেকবারই সাফল্য অর্জন করেছি সুতরাং এইবার আমরা নিশ্চিত এই ফুলবাড়ী লংমার্চের মধ্য দিয়ে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করলাম এবং সারা দেশের মানুষ এই জাতীয় সম্পদের উপর জাতীয় মালিকানা, জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সে ধরণের নীতিমালা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জনগণের শক্তি দরকার। রাজনৈতিক শক্তি দরকার। সেটার বিকাশের ক্ষেত্রে এই লংমার্চ একটা বিশাল ভূমিকা পালন করবে এবং উন্মুক্ত না, বিদেশী না, রপ্তানী না যে নীতিগত অবস্থান আমাদের এটা অবশ্যই বিজয়ী হবে।
মুক্তচিন্তাঃ তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির চুক্তি হওয়ার পরও আপনাদের জোরালো কোন কর্মসূচী চোখে পড়ে নাই। -এ বিষয়ে কিছু বলুন।
আনু মুহাম্মদঃ জোরালো কর্মসূচী মানে ..............এদের আসলেতো রাস্তায় ধরে পেটানো দরকার। কিন্তু জনগণের মধ্যেতো চেতনাটা যেতে হবে আগে। নাহলে জনগণ পেটানোতে অংশগ্রহণ করবে কেন? জনগণ যদি শত্রুকে চিহ্নিত করতে না পারে সেই কারণে এই যে লংমার্চে আমাদের অন্যতম বিষয়ই ছিল কিন্তু তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির বিরোধিতা। সুতরাং জোরালো কর্মসূচী নাই একথাটা পুরোপুরি ঠিক হবে না। লংমার্চের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রি করা কিংবা কানকো-ফিলিপস এর কাছে সমুদ্রে গ্যাস ব্লক দেওয়া কিংবা জ্বালানি নিরাপত্তার মাধ্যমে দায়মুক্তি আইন করা পার্লামেন্টের এই বিষয়গুলি কিন্তু লংমার্চে বারবার ঘুরেফিরে আসছে। সুতরাং লংমার্চও তাদের বিরুদ্ধে একটা কর্মসূচী।
মুক্তচিন্তাঃ সমপ্রতি জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া "বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০" সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য কী?
আনু মুহাম্মদঃ এটা হচ্ছে একটা সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী আইন যে জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষার কোন আইন পাশ করতে পারে না, যেমন- উদাহরণ হিসেবে বলি জাতীয় কমিটি থেকে প্রস্তাবিত একটা আইনের খসড়া 'খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধকরণ আইন ২০১০' এটার একটা খসড়া সংসদে বিল আকারে উত্থাপিত হয়েছিল বছর খানেক আগে। সংসদের সময় হয় নাই, সেটা দেখেও নাই, সেটা শোনেও নাই, সেটা নিয়ে আলোচনাও হয় নাই, কিছুই হয় নাই। কিন্তু সেই সংসদ-ই আবার জ্বলানি মন্ত্রণালয় যা খুশি তাই করতে পারবে তার বিরুদ্ধে জনগণ কোন প্রশ্ন করতে পারবে না সেই আইনটা আবার পাশ করেছে। তার মানে হচ্ছে জাতীয় সংসদ যে জনশত্রুদের কারখানায় পরিনত হয়েছে কিংবা প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে কিংবা বহুজাতিক কোম্পানীর স্বার্থরক্ষার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এটা হলো তারই প্রমাণ। কারণ, জাতীয় সংসদে যারা সদস্য হয় তারাতো জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তারাতো বিদেশী কোম্পানীর ভোটে নির্বাচিত হয় নাই- এটা কিন্তু আমার কথা নয়। এটা ফুলবাড়ীর শরিফা বেগম নামের একজন সাধারণ নারীর কথা। তিনি বলেছেন, তার একটা প্রশ্ন- সরকার যে এই ধরণের কাজ করে, সরকার কি বিদেশী কোম্পানীর ভোটে নির্বাচিত হয়েছে? নাকি আমরা তাদের ভোট দিয়েছি? ভোট দিলাম জনগণ আর সে কাজ করছে বিদেশী কোম্পানীর পক্ষে। কারণ কি? কারণ হলো যে, এরা যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় তখন প্রতারণা এবং নানারকমের বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নেয়। যে কথাগুলি তারা বলে নিজেরাই সে কথাগুলি বিশ্বাস করে না এবং ভোটটা নেয় বিদেশী কোম্পানীর কিংবা ধনিক লুটেরা শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার জন্য। সুতরাং তাদের নিয়তটাই খারাপ থাকে। সেই কারণে তারা সংসদে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলে কিভাবে গাড়ী বানানো যায়, বাড়ী বানানো যায় বা বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়, লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষা করা যায় সেই কাজ করে। এটা হলো তারই উদাহরণ।
মুক্তচিন্তাঃ জাতীয় কমিটিতে আছেন এরকম মন্ত্রীসহ তিনজন সাংসদ থাকার পরও এই আইন সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে এ সম্পর্কে জাতীয় কমিটির বক্তব্য কী?
আনু মুহাম্মদঃ সেটা নিয়ে জাতীয় কমিটিতে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আমরা প্রশ্ন করেছি সেই সংসদ সদস্যকে তারা বলেছেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু তাদের পার্টি যেটা সেই পার্টি কিন্তু এই বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সেই আন্দোলনে থেকেছে। আমি আশা করি যে, যারা জাতীয় কমিটিতে থাকবেন তাদের অবস্থান পরিষ্কার হবে। অবস্থান যদি পরিষ্কার না হয়, রাজনৈতিক ভাবেওতো তাদের জনগণের সামনে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে।
মুক্তচিন্তাঃ কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর ২০১০ 'সাপ্তাহিক' পত্রিকায় প্রকাশ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, এ চুক্তিতে দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না।-এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আনু মুহাম্মদঃ এটাতো জাতীয় কমিটির অবস্থনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। জাতীয় কমিটির অবস্থা হলো এই নিরাপত্তা বিল ফ্যাসিবাদী আইন। এটা কালাকানুন। এটা বাতিল করতে হবে। সুতরাং কোন দল এটার সমর্থন করে জাতীয় কমিটির সদস্য থাকতে পারে না। সেটা আমরা ওই দলকে জানিয়েছি যে, আপনাদের সভাপতি তার বক্তব্য পত্রিকায় গেছে সেখানে ওই নেতৃবৃন্দ আমাদের বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত মত। এটা তারা সমর্থন করেন না। এটা তারা পার্টিতে আলোচনা করবেন। সুতরাং আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করছি। এই বিষয়ে একটা পরিষ্কার অবস্থান আশা করি ওই পার্টি গ্রহণ করবে।
মুক্তচিন্তাঃ এ রকম একটি ভয়ঙ্কর আইন পাশ হওয়ার পরও জাতীয় কমিটির কোন জোরালো কর্মসূচী ছিল না এখনও নেই কেন?
আনু মুহাম্মদঃ লংমার্চ-ই তো জোরালো কর্মসূচী। আর লংমার্চের মধ্য দিয়ে গত ৬০টি জনসভায় আমরা এগুলোইতো বললাম। তোমাদের একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে। সেটা হলো পত্র-পত্রিকা দেখে জাতীয় কমিটির অবস্থান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, কেননা আমাদের বহু কর্মসূচী, বহু বিবৃতি এমনকি এই যে, বিল সম্পর্কিত আমাদের দু'টি বিতৃতি কোন পত্রিকায় ছাপা হয়নি। তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির বিরুদ্ধে ঢাকায় প্রোগ্রাম হয়েছে। সেগুলিও পত্রিকায় ছাপা হয় নাই। এটা হলো একটা, দ্বিতীয়টা হলো যে ধরণের কর্মসূচী নেয়া প্রয়োজন সেই অনুযায়ী জাতীয় কমিটির শরিক সংগঠনগুলির ব্যাপারতো আছে। আমরাতো ইচ্ছা করলেই একটা প্রোগ্রাম দিতে পারবো না। যেখানে শরিক রাজনৈতিক দলগুলির নানারকম কর্মসূচীর ব্যাপার আছে, তাদের শক্তির ব্যাপার আছে। সুতরাং অনেক কিছু বিবেচনা করে আমাদের করতে হয়। কিন্তু পত্রিকা বা মিডিয়া এখন ক্রমাগতভাবে মানে ক্রমবর্ধমান একটা নন-কোঅপারেট করেছে। সে বিষয়টিও আমরা বিবেচনার মধ্যে রাখছি। অলটারনেটিভ মিডিয়া বের করে যাতে আমাদের কথা এবং কর্মসূচী গুলি জনগণের কাছে যায়। তৃতীয়ত আরেকটা হচ্ছে এই আইনটা আইন দিয়ে রাষ্ট্র যদি নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারতো তাহলেতো পাকিস্তানই থাকতো। পাকিস্তানের সামরিক শাসন থাকতো, সামরিক শাসক যা খুশি তাই করতো। তাহলে একাত্তর সালে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে কিছু করতে পারতো না কেননা আইন অনুযায়ী পাকিস্তান থাকতো। আইন করে কোন কিছু হয় না। এই সমস্ত আইন দিয়ে কোনকিছু করতে পারবে না। শুধুমাত্র আইন নিয়ে তো আন্দোলন হবে না। আন্দোলন হবে সামগ্রিকভাবে এবং সামগ্রিকভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যদি জনগণের শক্তি তৈরি হয় তখন আইন দিয়ে ঠেকানোর মতা থাকবে না। সুতরাং, আমাদের মূল মনোযোগটা হচ্ছে জনগণের শক্তি তৈরি করা, জনগণের গণরায় তৈরি করা; সেই চেতনা তৈরি করা যা অনেক রকম বিভ্রান্তি বা মিথ্যাচারের মধ্য থেকে জনগণকে রক্ষা করা। এই সংবিধানের মধ্যেতো কতরকমের কালাকানুন আছে। কালাকানুনে ভরা সংবিধান। রাষ্ট্র হচ্ছে একটা কালাকানুনে ভরা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র। এটারতো প্রত্যেকটাই ধরা উচিত।
মুক্তচিন্তাঃ গত ২৪ তারিখ সরাসরি ওয়েব সাইটে খসড়া কয়লা নীতি প্রকাশ করা হলো, সেখানে উন্মুক্ত খনির বিধান আছে। অথচ এত দিনের প্রোগ্রামে (২৪-৩০) আপনারা এবিষয়ে জোরালো বক্তব্য বা কর্মসূচী নেন নাই কেন?
আনু মুহাম্মদঃ এটা তোমরা কিভাবে জানলে?
মুক্তচিন্তাঃ কোন পত্রিকা বা মিডিয়ায় আমরা দেখি নাই। রংপুর-দিনাজপুর বা আজকে এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য নাই।
আনু মুহাম্মদঃ তাতে তোমাদের শ্রবণ সম্পর্কে আমার একটা ইয়ে তৈরি হচ্ছে। কারণ, আজকের যে ঘোষণা তাতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে এই কয়লানীতি আমরা প্রত্যাখান করি এবং এর মধ্যে আমি অনেকগুলি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছি। বিবিসিতে, রেডিও টুডে-তে যেখানে কয়লানীতি সম্পর্কে আমাদের মতামত দেয়া হয়েছে এবং এই কয়লানীতি আমাদের হাতে আসার পর যে ৬০টি জনসভা, পথসভা হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে এই কয়লানীতি প্রত্যাখান করে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
মুক্তচিন্তাঃ এ বিষয়ে তাহলে আপনাদের কর্মসূচী কি?
আনু মুহাম্মদঃ এগুলোতো আলাদা আলাদা করে আর কর্মসূচী ভাগ করা যাবে না। এগুলি চলতে থাকবে। যেমন কয়লানীতি নিয়ে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে এই কয়লানীতি কিভাবে প্রতারণা মূলক এবং কিভাবে জনগণের স্বার্থবিরোধী সেটাকে ব্যাখ্যা করা। মানি না বললেইতো হবে না। সেটা জনগণের কাছে আবার ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ তাদেরতো একটা পাল্টা প্রচার আছে। যে আমরা নতুন কিছু দিচ্ছি এখানে অনেক কিছু আছে, জনগণের স্বার্থ আছে এখন এটাকে এঙ্পোজ করার জন্য সেটা করতে হবে। তোমাদেরও করতে হবে। এগুলো তোমাদেরও কাজ। তোমাদের এগুলি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে, কয়লানীতি ধরে ধরে আলোচনা করতে হবে। আমাদের এখনতো জাতীয় স্বার্থে কাজ করার মতো, লেখার মতো লোকজনের খুবই অভাব, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যদি এটা তৈরি না হয়। তাহলেতো আমাদের পক্ষে অগ্রসর হওয়া বেশ কঠিন। এই যে এ সমস্ত বিষয় নিয়ে লেখালেখি করবে এরকম কয়জন আমরা পাচ্ছি? কিংবা কথাবার্তা বলছে? পত্রপত্রিকায় কয়জনের নাম দেখা যায়? যারা এগুলি নিয়ে লেখালেখি করে? তৈরি করতে হবে না এগুলি? সেই কাজগুলি হচ্ছে একটা ব্যাপক প্রক্রিয়া যেগুলোর জন্য বিভিন্ন দিক থেকে উদ্যোগ দরকার। তোমাদের এটাও আমি মনে করি এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং এধরণের উদ্যোগগুলি যদি আরো বেশি বেশি বাড়তে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই কাজগুলি আরো বেশি সহজ হবে।
মুক্তচিন্তাঃ হাসিনা-মনমোহন চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার ও করিডোর দেওয়া হয়েছে এ প্রসঙ্গে আপনাদের কোন কর্মসূচী নেই কেন?
আনু মুহাম্মদঃ এগুলি সম্পর্কে এখনও কোন রকম পরিষ্কার কিছু বলা হয় নাই। হাসিনা বলেছে বন্দর ব্যাবহার করতে দেওয়া হবে, বন্দরতো সবাই ব্যবহার করে যেকোন আন্তর্জাতিক বন্দর যেমন-এয়ারপোর্ট। এখন যদি বলে যে, বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এয়ারপোর্টতো ব্যবহার করছে সবাই। এখন বিশেষভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার অর্থ তাহলে আছে কিছু। সেইটা কি? সেটাতো আগে একটা জায়গায় আসতে হবে। আমাদের বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে হবে। এমনিতেই হৈচৈ করলে হবে না। আমরা সাধারণভাবে ঐ চুক্তির সময় শুধু বলেছি আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী, জাতীয় মালিকানার পরিপন্থী কোন সিদ্ধান্ত হলে জাতীয় কমিটি সেটা মানবে না।
মুক্তচিন্তাঃ ইতোপূর্বে জাতীয় কমিটির আন্দোলনের কারণে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী, বিএনপি-জামায়াত জোট সুবিধাভোগী হয়েছে জনগণের মতায়নের প্রশ্নে এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী?
আনু মুহাম্মদঃ এই আন্দোলনের ম্যধ্য দিয়ে কেউ বেনিফিটেট হবে না আর। কারণ, এই আন্দোলনটা খুব কনক্রিট একটা বিষয় তুলে ধরেছে। এটা নিছক সরকার বিরোধিতা না। কনক্রিট বিষয়গুলো হলো বিএনপি'র যদি বেনিফিট নিতে হয় তাহলে পরিষ্কারভাবে তাকে বলতে হবে আমি উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির বিরোধিতা করি, আমি বহুজাতিক মালিকানার বিরোধিতা করি, আমি রপ্তানির বিরোধিতা করি। বিএনপি কিন্তু একথা বলতে পারে না। সেকারণে জাতীয় কমিটির দাবিগুলির ব্যাপারে বিএনপি'র কোন অবস্থান নাই, 'পি এস সি ২০০৮' সম্পর্কে বিএনপি'র কোন অবস্থান নাই এবং এই আন্দোলনগুলি যত কনক্রিট হচ্ছে, যত সুনির্দিষ্ট হচ্ছে তত কিন্তু এগুলোর আলাদা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে ইনডিপেনডেন্ট ক্ষেত্র। যেটা অতীতেও হয়েছে যে, বামপন্থীরা এ আন্দোলন করলো এই সমস্ত দলগুলি আবার নিয়ে গেল। জাতীয় কমিটির আন্দোলন যেভাবে সুনির্দিষ্ট একটা জায়গা তৈরি করেছে মানুষের চেতনার জায়গা কিংবা শক্তির জায়গা তাতে এগুলি যেকোন ধরণের লুটেরাদের দল ব্যবহার করবে এটার কোন সম্ভাবনা নেই।
মুক্তচিন্তাঃ জাতীয় কমিটি তাহলে এটার মধ্য দিয়ে জনগণের রাষ্ট্র কায়েমে/ক্ষমতা দখলে ভূমিকা কি হবে বলে আপনি মনে করেন?
আনু মুহাম্মদঃ আমি এত দূর পর্যন্ত কথা বলতে পারবো না বা আমি এতটুকু বলি, এটার মধ্যেতো অনেকগুলি রাজনৈতিক দল আছে এবং যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে তাদের নেতাদের বক্তৃতা শুনলে বা তাদের কাগজপত্র দেখলে এটা বোঝা যায় তারা সবাই বিপ্লবের কথা বলে সমাজতন্ত্রের কথা বলে। এখন কোনটা ঠিক বলে কোনটা বেঠিক বলে এগুলি নিয়ে তো অনেক মতপার্থক্য আছে। সেই মতপার্থক্যগুলি সত্ত্বেও তারা নির্দিষ্ট কিছু দাবিতে জাতীয় কমিটিতে আছে। সুতরাং জাতীয় কমিটি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রশ্নটা যদি নিয়ে আসে সাথে সাথে এটা ১৪টা জাতীয় কমিটিতে পরিণত হবে। এটা বাংলাদেমের জন্য খুব ভালো জিনিস হবে না। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে জাতীয় শক্তি তৈরি হচ্ছে, যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে আন্দোলন তৈরি হচ্ছে সেই শক্তিটা নিশ্চয়ই এ ধরণের বিপ্লবী রূপান্তরের কাজের জন্য একটা বড় ধরণের সঞ্চয় হচ্ছে, শক্তি তৈরি হচ্ছে। এই পর্যায়ে আমি এতটুকুই বলতে পারবো।
মুক্তচিন্তাঃ স্যার আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আনু মুহাম্মদঃ তোমাদেরকেও ধন্যবাদ।
No comments