অযত্নে অবহেলায় কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরী - স্বপন বর্মণ
কারমাইকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সীমা। কথা হচ্ছিল কলেজের লাইব্রেরী প্রসেঙ্গে। লাইব্রেরী কি নিয়মিত যান?
প্রথম প্রথম নিয়মিত যেতাম, এখন তেমন একটা যাওয়া হয় না।
এখন নিয়মিত যাওয়া হয় না কেন?
লাইব্রেরীতে শুধু সিলেবাস ভিত্তিক বই সাহিত্যিক বা সাধারণ জ্ঞানের বই তেমন একটা নেই। তবে মাঝে মাঝে লাইব্রেরীতে গিয়ে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট নিউজ পড়ি।
কলেজের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেল তাদের অনেকেই লাইব্রেরীতে যান না। দু'একজন লাইব্রেরী থেকে বই নিতে এসেছিল কিন্তু এত এত নিয়ম কানুন দেখে বিরক্ত হয়ে আর যান না। ১৯৯৫ সালে বর্তমান আকারে সংস্কার করা কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরী মূলত দু'টি অংশে বিভক্ত যার একটি বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের জন্য (মূল লাইব্রেরী ভবন) ও অপরটি সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের জন্য যার অবস\'ান বাংলা বিভাগ সংলগ্ন। এখানে উল্লেখ্য যে, এখনো অনেক ছাত্রছাত্রীই দ্বিতীয় লাইব্রেরী ভবনের কথা জানেন না। বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের জন্য মূল লাইব্রেরী ভবনের পরিবেশ মোটামোটি ভালো হলেও সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের লাইব্রেরীর চেয়ারটেবিলে ধূলোবালির আস্তরণ জমতে দেখা যায়। ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা যথাপুযুক্তভাবে পূরণ না করতে পারা এবং ব্যাপক প্রচারহীনতাই এর কারণ বলে অনেকে মনে করেন। লাইব্রেরী কার্ড বা আইডি কার্ড জমা দিয়ে পাঠক প্রবেশ করতে হয়। লাইব্রেরীর মূল রুম দু'টোতে প্রায় চৌদ্দশতাধিক বই আছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের দোতালায় প্রায় সত্তর হাজার বই সেলফ্ বন্দী আছে। বইয়ের লিস্ট জমা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা এখান থেকে এক সপ্তাহের জন্য বই নিতে পারে। যেহেতু স্বতঃস্ফূর্তভাবে বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হয় না (সেলফে বই বন্দী থাকায়) বরং ক্যাটালগ দেখে বইয়ের লিস্ট জমা দিয়ে বই নিতে হয় বলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই নেয়ার উৎসাহ কম। ফলে প্রতিদিন প্রচুর বই উঁইয়ের খাদ্য হচেছ। যার উদাহরণ প্রায়ই লাইব্রেরীর সামনে পোকায় কাটা বইয়ের স্তুপ দেখে বোঝা যায়।
বিভিন্ন লেখকের সিলেবাস ভিত্তিক বইয়ের পাশাপাশি এখানে বেশ কয়েকটি মাসিক ,পাক্ষিক ও চারটি দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায় যার একটি ইংরেজি। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও দু'একটি জ্ঞানগর্ভ ও প্রগতিশীল বইও পাওয়া যায়। যার মধ্যে লুইস হেনরী মর্গানের "আদিম সমাজ", হুমায়ন আজাদের "মহাবিশ্ব" ইত্যাদি। চোখে পড়ে মহাবিশ্ব বইয়ের ১৭ নং পৃষ্ঠায় লেখকের তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করায় কোন ছাত্রের লিখিত মন্তব্য- "বোঝার ভুল, পদার্থ সৃষ্টি করল কে? শালার ঈমান নাই, কাফের। এ শালা জারুয়া আছে।" যা শিষ্টাচার বহিভর্ূত ও লেখকের প্রতি অশ্রদ্ধার সামিল। এবার আসা যাক লাইব্রেরী ভবন-২ প্রসঙ্গে। এ লাইব্রেরী সংগ্রহে ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের সিলেবাস ভিত্তিক বই থাকলেও জ্ঞানগর্ভ ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার বইয়ের অভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে রবীন্দ্র, বঙ্কিম, শরৎ, রোকেয়া সমগ্র এবং সিমন দ্যা বোভেয়ারের "দ্বিতীয় লিঙ্গ" থাকায় মনে হয় ধূ-ধু মরুভূমিতে যেন মরুদ্যানের আভাস।
কলেজ সূত্র থেকে জানা যায় রংপুর জেলা গ্রন্থাগার থেকে ২৫০টি বই নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যাত্রা শুরু কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরীর বর্তমান সংগ্রহ প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি বই। এছাড়াও বাস্তবে দেখা না গেলেও লাইব্রেরীর আয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার টাকার বই নতুন করে সংযুক্ত হচেছ বলে লাইব্রেরী সূত্র দাবি করে। তবে অনেক দাতা প্রতিবছর বড় অংকের বই দান করেন। তাহলে এই বিশাল সংগ্রহশালা থেকে ছাত্রছাত্রীরা বড়জোর ৪ হাজারের মত বই পড়ার সুযোগ পায়। এ বিষয়ে এক লাইব্রেরী কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, লাইব্রেরীর মোট সংগ্রহের বেশিরভাগ বই দ্বিতীয় তলায় ( বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের)। সেখানে নিরাপত্তা জনিত কারণে ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ নিষেধ। তাহলে এ বিশাল সংগ্রহশালা ছাত্রছাত্রীদের কি উপকারে আসে তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে, এটা তার এক্তিয়ার বহির্ভূত। তাহলে কি এইসব বই শুধু উঁইপোকার খাদ্য হিসেবেই সেলফে বন্দী থাকবে? এখানে উল্লেখ্য লাইব্রেরী ভবনের সামনে প্রায়ই উঁইপোকায় খাওয়া জীর্ণশীর্ণ বই/বইয়ের পাতা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
লাইব্রেরীতে অধ্যয়নরতদ্বতীয় বর্ষের ছাত্র রতন সরকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রশ্নের নোট করার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক কামিনী মোহন সাহার "তরঙ্গ ও শব্দ" বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা ফটোকপি করার প্রয়োজন হয়। লাইব্রেরীর চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারীকে অগ্রীম টাকা এবং নাসতা-পান খাইয়ে সে একসপ্তাহ পর ওই পৃষ্ঠাগুলোর ফটোকপি হাতে পায়। এরপর থেকে সে প্রয়োজনীয় অংশ ফটোকপি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ প্রসঙ্গে লাইব্রেরীর বুক শর্টারের সাথে কথা হলে তিনি জানান অনেক আবেদনের পর তারা লাইব্রেরীতে একটি কম্পিউটার পেয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক দাবির প্রেক্ষিতে একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন চেয়ে তারা ইতমধ্যে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে আবেদন করেছেন।
লাইব্রেরীতে অধ্যায়নের সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, ছাত্ররা থাকলে তারা লাইব্রেরী সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকাল ৪.০০ টা পর্যন্ত খোলা রাখেন। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা যায় বেশিরভাগ সময়ই লাইব্রেরী ২.০০ টার পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রায় সব ডিপার্টমেন্টেই টিফিন সময় বাদে উল্লেখিত সময়ে ক্লাশ থাকে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের লাইব্রেরীতে যাওয়া সম্ভব হয় না। এেেত্র সকাল ৮.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা অবধি লাইব্রেরী খোলা রাখলে ছাত্রছাত্রীরা বিনোদনের জন্য বিকেলে বৃন্দাবন, কে.ডি.সি রোড বা রেলগেটে অহেতুক আড্ডা না মেরে লাইব্রেরীতে আসবে। লাইব্রেরী চত্ত্বর মুখরিত হয়ে উঠবে ছাত্রছাত্রীদের মিলন মেলায়। বিখ্যাত মণিষী কার্ল মার্কসের ভাষায়, "ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞান না জানা ছাড়া কখনই একটি মানুষের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ হয় না।" আর এসবের চমৎকার সমন্বয় হতে পারে কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরী। বলা হয়ে থাকে কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরীর সংগ্রহে যে বই আছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহেও এত বই নাই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী নতুন ও প্রগতিশীল লেখকদের বই অন-ভর্ূক্ত না হওয়ায় তা ছাত্রছাত্রীদের চেতনা বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কারমাইকেল কলেজ কর্তর্ৃক গ্রন্থাগারে নতুন প্রগতিশীল বই সংযুক্তি, অবিলম্বে একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন স্থাপন, অবাধ বই নেওয়ার সুযোগ দান এবং ক্লাশ বহির্ভূত সময়ে লাইব্রেরী খোলা রেখে কারমাইকেল কলেজ তার অতীত গৌরব সমুজ্জ্বল রাখবে এটাই এই কলেজের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশা।
প্রথম প্রথম নিয়মিত যেতাম, এখন তেমন একটা যাওয়া হয় না।
এখন নিয়মিত যাওয়া হয় না কেন?
লাইব্রেরীতে শুধু সিলেবাস ভিত্তিক বই সাহিত্যিক বা সাধারণ জ্ঞানের বই তেমন একটা নেই। তবে মাঝে মাঝে লাইব্রেরীতে গিয়ে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট নিউজ পড়ি।
কলেজের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেল তাদের অনেকেই লাইব্রেরীতে যান না। দু'একজন লাইব্রেরী থেকে বই নিতে এসেছিল কিন্তু এত এত নিয়ম কানুন দেখে বিরক্ত হয়ে আর যান না। ১৯৯৫ সালে বর্তমান আকারে সংস্কার করা কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরী মূলত দু'টি অংশে বিভক্ত যার একটি বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের জন্য (মূল লাইব্রেরী ভবন) ও অপরটি সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের জন্য যার অবস\'ান বাংলা বিভাগ সংলগ্ন। এখানে উল্লেখ্য যে, এখনো অনেক ছাত্রছাত্রীই দ্বিতীয় লাইব্রেরী ভবনের কথা জানেন না। বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের জন্য মূল লাইব্রেরী ভবনের পরিবেশ মোটামোটি ভালো হলেও সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের লাইব্রেরীর চেয়ারটেবিলে ধূলোবালির আস্তরণ জমতে দেখা যায়। ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা যথাপুযুক্তভাবে পূরণ না করতে পারা এবং ব্যাপক প্রচারহীনতাই এর কারণ বলে অনেকে মনে করেন। লাইব্রেরী কার্ড বা আইডি কার্ড জমা দিয়ে পাঠক প্রবেশ করতে হয়। লাইব্রেরীর মূল রুম দু'টোতে প্রায় চৌদ্দশতাধিক বই আছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের দোতালায় প্রায় সত্তর হাজার বই সেলফ্ বন্দী আছে। বইয়ের লিস্ট জমা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা এখান থেকে এক সপ্তাহের জন্য বই নিতে পারে। যেহেতু স্বতঃস্ফূর্তভাবে বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হয় না (সেলফে বই বন্দী থাকায়) বরং ক্যাটালগ দেখে বইয়ের লিস্ট জমা দিয়ে বই নিতে হয় বলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই নেয়ার উৎসাহ কম। ফলে প্রতিদিন প্রচুর বই উঁইয়ের খাদ্য হচেছ। যার উদাহরণ প্রায়ই লাইব্রেরীর সামনে পোকায় কাটা বইয়ের স্তুপ দেখে বোঝা যায়।
বিভিন্ন লেখকের সিলেবাস ভিত্তিক বইয়ের পাশাপাশি এখানে বেশ কয়েকটি মাসিক ,পাক্ষিক ও চারটি দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায় যার একটি ইংরেজি। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও দু'একটি জ্ঞানগর্ভ ও প্রগতিশীল বইও পাওয়া যায়। যার মধ্যে লুইস হেনরী মর্গানের "আদিম সমাজ", হুমায়ন আজাদের "মহাবিশ্ব" ইত্যাদি। চোখে পড়ে মহাবিশ্ব বইয়ের ১৭ নং পৃষ্ঠায় লেখকের তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করায় কোন ছাত্রের লিখিত মন্তব্য- "বোঝার ভুল, পদার্থ সৃষ্টি করল কে? শালার ঈমান নাই, কাফের। এ শালা জারুয়া আছে।" যা শিষ্টাচার বহিভর্ূত ও লেখকের প্রতি অশ্রদ্ধার সামিল। এবার আসা যাক লাইব্রেরী ভবন-২ প্রসঙ্গে। এ লাইব্রেরী সংগ্রহে ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের সিলেবাস ভিত্তিক বই থাকলেও জ্ঞানগর্ভ ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার বইয়ের অভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে রবীন্দ্র, বঙ্কিম, শরৎ, রোকেয়া সমগ্র এবং সিমন দ্যা বোভেয়ারের "দ্বিতীয় লিঙ্গ" থাকায় মনে হয় ধূ-ধু মরুভূমিতে যেন মরুদ্যানের আভাস।
কলেজ সূত্র থেকে জানা যায় রংপুর জেলা গ্রন্থাগার থেকে ২৫০টি বই নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যাত্রা শুরু কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরীর বর্তমান সংগ্রহ প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি বই। এছাড়াও বাস্তবে দেখা না গেলেও লাইব্রেরীর আয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার টাকার বই নতুন করে সংযুক্ত হচেছ বলে লাইব্রেরী সূত্র দাবি করে। তবে অনেক দাতা প্রতিবছর বড় অংকের বই দান করেন। তাহলে এই বিশাল সংগ্রহশালা থেকে ছাত্রছাত্রীরা বড়জোর ৪ হাজারের মত বই পড়ার সুযোগ পায়। এ বিষয়ে এক লাইব্রেরী কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, লাইব্রেরীর মোট সংগ্রহের বেশিরভাগ বই দ্বিতীয় তলায় ( বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের)। সেখানে নিরাপত্তা জনিত কারণে ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ নিষেধ। তাহলে এ বিশাল সংগ্রহশালা ছাত্রছাত্রীদের কি উপকারে আসে তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে, এটা তার এক্তিয়ার বহির্ভূত। তাহলে কি এইসব বই শুধু উঁইপোকার খাদ্য হিসেবেই সেলফে বন্দী থাকবে? এখানে উল্লেখ্য লাইব্রেরী ভবনের সামনে প্রায়ই উঁইপোকায় খাওয়া জীর্ণশীর্ণ বই/বইয়ের পাতা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
লাইব্রেরীতে অধ্যয়নরতদ্বতীয় বর্ষের ছাত্র রতন সরকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রশ্নের নোট করার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক কামিনী মোহন সাহার "তরঙ্গ ও শব্দ" বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা ফটোকপি করার প্রয়োজন হয়। লাইব্রেরীর চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারীকে অগ্রীম টাকা এবং নাসতা-পান খাইয়ে সে একসপ্তাহ পর ওই পৃষ্ঠাগুলোর ফটোকপি হাতে পায়। এরপর থেকে সে প্রয়োজনীয় অংশ ফটোকপি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ প্রসঙ্গে লাইব্রেরীর বুক শর্টারের সাথে কথা হলে তিনি জানান অনেক আবেদনের পর তারা লাইব্রেরীতে একটি কম্পিউটার পেয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক দাবির প্রেক্ষিতে একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন চেয়ে তারা ইতমধ্যে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে আবেদন করেছেন।
লাইব্রেরীতে অধ্যায়নের সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, ছাত্ররা থাকলে তারা লাইব্রেরী সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকাল ৪.০০ টা পর্যন্ত খোলা রাখেন। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা যায় বেশিরভাগ সময়ই লাইব্রেরী ২.০০ টার পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রায় সব ডিপার্টমেন্টেই টিফিন সময় বাদে উল্লেখিত সময়ে ক্লাশ থাকে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের লাইব্রেরীতে যাওয়া সম্ভব হয় না। এেেত্র সকাল ৮.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা অবধি লাইব্রেরী খোলা রাখলে ছাত্রছাত্রীরা বিনোদনের জন্য বিকেলে বৃন্দাবন, কে.ডি.সি রোড বা রেলগেটে অহেতুক আড্ডা না মেরে লাইব্রেরীতে আসবে। লাইব্রেরী চত্ত্বর মুখরিত হয়ে উঠবে ছাত্রছাত্রীদের মিলন মেলায়। বিখ্যাত মণিষী কার্ল মার্কসের ভাষায়, "ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞান না জানা ছাড়া কখনই একটি মানুষের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ হয় না।" আর এসবের চমৎকার সমন্বয় হতে পারে কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরী। বলা হয়ে থাকে কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরীর সংগ্রহে যে বই আছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহেও এত বই নাই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী নতুন ও প্রগতিশীল লেখকদের বই অন-ভর্ূক্ত না হওয়ায় তা ছাত্রছাত্রীদের চেতনা বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কারমাইকেল কলেজ কর্তর্ৃক গ্রন্থাগারে নতুন প্রগতিশীল বই সংযুক্তি, অবিলম্বে একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন স্থাপন, অবাধ বই নেওয়ার সুযোগ দান এবং ক্লাশ বহির্ভূত সময়ে লাইব্রেরী খোলা রেখে কারমাইকেল কলেজ তার অতীত গৌরব সমুজ্জ্বল রাখবে এটাই এই কলেজের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশা।
No comments