Header Ads

Header ADS

শিক্ষা এবং শিক্ষারাজনীতি / রায়হান কবীর


মানুষ হিসেবে বিকাশের পর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মানুষ যে জ্ঞান অর্জন করে তা বিকশিত হতে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্মসেই আদিমকালে বৈরিতাপূর্ন প্রকৃতির মাঝে বেঁচে থাকার কৌশল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যে জ্ঞানের শুরু ত া বিভিন্ন বৈচিত্র্যময়তা এবং পরীক্ষা- নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছেআর এই জ্ঞান অর্জনের পথ বা পদ্ধতিই হলো শিক্ষাবলা হয়ে থাকে কোনো দেশের উন্নতি-অবনতি, ভবিষ্যত ঐ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেঅর্থাৎ কোনো দেশের শিক্ষা বা শিক্ষা ব্যবস্থাই ওই দেশের বর্তমান-ভবিষ্যতের নির্ধারকস্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায় এই যে শিক্ষা’, এই শিক্ষা জিনিসটা কি?
অভিধান ঘাটলে এর অর্থ পাওয়া যায় পড়াশুনা, অভ্যাস, চর্চা, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, অধ্যয়ন ইত্যাদিএই অর্থগুলো কি শিক্ষা সম্পর্কে আমাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারে? যদি না পারে তাহলে সঠিকটা কী? সংজ্ঞাটা এরকম হতে পারে... মানুষের ভেতরকার গুণ ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে তাকে মানব সমাজ বান্ধব অস্তিত্বে পরিণত করার যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া তার নাম শিক্ষাআরো প্রশ্ন আসতে পারে এ রকম শিক্ষার মানদণ্ড কেমন হবে? “সাধারণত শিক্ষার মূল মানদণ্ড নির্ণয় করা হয় জৈবিক মানুষকে বুদ্ধি, বিবেক, মেধা-মনন, যুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে কতটা বিকশিত করে, করেছে বা করতে পারে তার উপরএক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেআবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানহচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে মানব সভ্যতার অর্জিত জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়া সমাজের সুষ্ঠু বিকাশ বা সমাজ প্রগতির স্বার্থে, অর্জিত জ্ঞানের সাহায্যে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং সমাজে তার প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ থাকে অর্থাৎ একাধারে জ্ঞান চর্চা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং নতুন জ্ঞানের প্রয়োগের ক্ষেত্র হবে এটি
কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যখন একটি শিক্ষার্থী প্রবেশ করে সে তখন নিতান্তই একজন শিশু, অগঠিত মানব সন্তানকিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতাকে মেধা-মনন ও সৃজনশীলতায় একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়- যা অন্য কোনো কিছু দিতে পারে নামূলত সে কারণেই বলা হয়ে থাকে শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ ভুলতে শেখায়, মানুষে-মানুষে ঐক্য সৃষ্টির তাগিদ দেয়সুনির্দিষ্টভাবে তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে দুইটি
১. দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, যা মানুষকে জাগতিক কাজে-কর্মে উপযোগী করবে২. সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি, যা সমাজ প্রগতির পথ দেখাবেঅর্থাৎ শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ তৈরি করা নয়, জ্ঞানী, মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষও তৈরি করা
অথচ বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে আমরা কি দেখতে পাই? প্রায় প্রতিটি দেশের সংবিধানে শিক্ষা অধিকারেরকথা লেখা থাকলেও রাষ্ট্র কি সেটা জনগণকে নিশ্চিত করে? মজাটা আসলে এখানেই, রাষ্ট্র নিরপেক্ষ নয়; যে রাষ্ট্রের চরিত্র যেমন সে রাষ্ট্র সেই সকল শ্রেণীর মানুষেরই সেবা করেপুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কাজ তাই পুঁজির মালিকের সেবা করামানুষ নয়, মুনাফাই সেখানে সিদ্ধান্ত নেয় মানুষের জন্য কি করা হবেএক্ষেত্রে শিক্ষাকে লাভজনক বিনিয়োগের নতুন নাম 'ঊফঁ-ইঁংরহবংং'২০০৩ সালে এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার২০০৪ সালে যার মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৬৫ বিলিয়ন ডলারফলে শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায় মুনাফা অর্জনের মাধ্যম এবং যথারীতি পৃথিবীর বড় বড় কর্পোরেট পুঁজি লগ্নী হতে থাকেএই নীলনকশা বাস্তবায়নের নামে তাদেরই সেবাদাস সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতিএরই একটি প্রকল্প গউএ (গরষষবহরঁস উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ) বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ৮২টি দেশে প্রায় ১১.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের যে পোর্টফোলিও তৈরি করেছে তাতে ২০১১ সালে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার। (িি.িড়িৎষফনধহশ.ড়ৎম.নফ) বিশ্ব শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য আর নৈরাজ্যের মূল এখানেইফলে শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য বানানোর আড়তদারি নেয় রাষ্ট্রমূল কথা এসব কথিত দাতাদের (!) বিনিয়োগের জায়গা তৈরি
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা করিবেনকিন্তু কতটুকু দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের রাষ্ট্র?
৮২,২১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্য সরকারি হলো ৩৭,৬৭২টি বাকিগুলো কিণ্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা বা এনজিও কর্তৃক পরিচালিত স্কুল১৮,৭৯৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি ৩১৭টি (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড)সরকারি কলেজ প্রায় ২৫৩টি (২৮ ফেব্রয়ারি ২০১১, সমকাল) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ৩৫টিপ্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়গুলোর হাজারো সমস্যার কথা যদি বাদও দেই এনজিও কর্তৃক পরচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জনগণকে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন ন্যূনতম শিক্ষা দেওয়াযা তাদের কোনো কাজে আসবে না কিন্তু তারা যে শিক্ষা অর্জন করবে তা দিয়ে মোবাইল টিপতে,  টিভি, ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ ইত্যাদি চালাতে পারবেবাংলাদেশের মতো দেশ যেহেতু এসব পণ্য আমদানি করে কর্পোরেট ব্যবসা তাই রমরমা!
মাধ্যমিক স্কুলগুলো বেশিরভাগেরই অবস্থা হলো জাগতিকতা বিবর্জিত প্রাইভেট কোচিং নির্ভর মুখস্থ নামক নকলের আখড়াআর ৩৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো তো আর সাধারণের হিসাবের মধ্যে পড়ে না!) কী অবস্থা ০৩.১১.২০১১ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের দৈনিক কালের কণ্ঠ’-এর নিউজ বিশ্ব সেরা ৪০০টিতে নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়
আবার এর উপর আছে বিশ্বব্যাংকের থাবাবিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কৌশলপত্রে সুপারিশ করা হয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধীরে ধীরে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চলতে হবে নিজেদের আয়ে এবং এই আয়ের জন্য জোর দেওয়া হয়েছে বেতন ও বিভিন্ন ফি বৃদ্ধিকৌশলপত্রে আরো সুপারিশ করা হয় (১) উচ্চ শিক্ষায় সরকারি সমস্ত ভর্তুকি ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া (২) মৌলিক বিজ্ঞানসহ সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ের বাজার মূল্য না থাকায় অর্থাৎ পাশের পর এসব বিষয়ে উপযুক্ত চাকরি না থাকায় এগুলোর পরিবর্তে তথ্য-প্রযুক্তি, ব্যবসা ও শিল্প বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা (বাংলাদেশর অর্থনীতি যেহেতু দোকানদারি অর্থনীতি অর্থাৎ এই অর্থনীতির সহায়ক!)। (৩) আবাসিক হল নির্মাণ না করা। (৪) ক্যাম্পাস পুলিশ গঠন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ (যদিও এই রাজনীতিকে নষ্ট করেছে সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্র নামধারী গুন্ডাবাহিনী) ইত্যাদি
এখানে দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয় হল, সেই পাকিস্তান আমলের শরীফ কমিশন থেকে শুরু করে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন (১৯৭৪), শাসসুল হক কমিটির প্রতিবেদন (১৯৯৭) এবং জাতীয় শিক্ষানীতি (২০১০) সবগুলোতেই বাজারমুখী শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষা থেকে ভর্তুকি কমানোর সুপারিশ করা হয়েছেএবং এতসব সুপারিশের পিছনে কারণ দেখানো হয়েছে সরকারের বাজেট ঘাটতি বা শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় করার অসামর্থ
এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু হয়
এখন প্রশ্ন হলো এই যে শিক্ষাতা কে লাভ করবে? যার মেধা আছে সে (যদিও এই মেধার মানদণ্ড পক্ষপাত দুষ্ট কেননা একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান নিশ্চয়ই পড়ালেখার সমান পরিবেশ, উপকরণ ও নিশ্চয়তা পায় নাউদাহরণস্বরূপ একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানকে পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারের কাজ বা তার বাবা-মায়ের কাজে সাহায্য করতে হয়পড়ালেখার যথেষ্ট সময়, পরিবেশ, প্রাইভেট টিউশন (!) সে পায় নামধ্যবিত্তের সন্তান মোটামুটি পড়ার পরিবেশ, সময় বা কিছু কিছু সুবিধা পেতে পারে আর উচ্চবিত্তের সন্তান, তার জন্য আছে উপযুক্ত পরিবেশ, যথেষ্ট সময়, পর্যাপ্ত টিউটর, কোচিং সেন্টার ইত্যাদিএকাডেমিক্যালী কার রেজাল্ট ভালো হবে তা বিচারের ভার পাঠকের উপর ন্যাস্ত হলো!), নাকি যার বাবার টাকা আছে সেগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ সরকার যে নীতি দ্বারা শিক্ষা খাত পরিচালনা করছে তার মোদ্দাকথা হলো যতই যোগ্যতা থাকুক, টাকা যদি না থাকে তাহলে সে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে নাশত চেষ্টা করলেও না। (বাংলাদেশের প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায় প্রকৃত অবস্থা কি? অর্থাৎ প্রাইমারিতে যতজন ভর্তি হবে ততজন চাইলেও হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারবে নাআবার হাইস্কুলে যতজন ভর্তি হবে তারা চাইলেও কলেজে ভর্তি হতে পারবে না এবং যতজন কলেজে ভর্তি হবে ততজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে নামজার ব্যাপার হলো একজন শিক্ষার্থী ভালো স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে পারাকে বলা হচ্ছে চান্সপাওয়া সেটা যে তার ন্যূনতম অধিকার সেটাকে উহ্য রাখা হয়।)
আবার প্রশ্ন আসতে পারে রাষ্ট্রের টাকা কার টাকা? যেহেতু জনগণের শ্রম ও ট্যাক্সই রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদের উৎস কাজেই এই সম্পদ শুধুমাত্র জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিৎঢাকা শহরতো বটেই, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম গঞ্জেই গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপনি বিতানযেগুলো বিদেশি পণ্যে সয়লাব যা আমাদের প্রবাসি শ্রমিকদের কষ্টে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আমদানি করাঅথচ আমাদের শপিংমলের দরকার নাই, আমাদের দরকার প্রতিটি থানায় থানায় হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বড় পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্রআবার যুক্তি দেয়া হয় আমাদের টাকা নেইআমাদের টাকা যে আছে এবং জনগণকে শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা দেবার মত যথেষ্ট আছে সেটা নিচের উদাহরণ থেকে বোঝা যাবে
(১) আমাদের মাত্র ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বছরে বাজেট মাত্র ১হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি অথচ বিদেশি মোবাইল কম্পানিগুলো, তেল গ্যাস উত্তলোনকারী বহুজাতিক কম্পানিগুলো প্রতি বছর অর্থ পাচার করে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের প্রায় ১০ গুণ
(২) যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে সরকারের এত অনীহা, যার জন্য এত আন্দোলন সংগ্রাম সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বছরে প্রায় ৪৩,৪৭৮,২৬ মার্কিন ডলার২০১০ সালে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর বাজেট ছিল ১.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রায় ৩০৬ টি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট এর সমানসশস্ত্র বাহিনীর বাজেট শতকরা মাত্র ১ ভাগ কমালে প্রায় ৩.৫টি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যায়। (হিসাব মেলানোর ভার পাঠকের উপর ন্যাস্ত করা হল।)
এই অবস্থা যে শুধু বাংলাদেশের মত তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তা নয়বিশ্ব পুঁজির মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এর ব্যতিক্রম নয়নিচের উদাহরণটি লক্ষ্য করা যাক
যদি একজন মার্কিন শিক্ষার্থী কোনদিন সিনেমায় না যায়, নতুন জামাকাপড় না কেনে, যদি চুলদাড়ি না কাটায় অর্থাৎ কেবলমাত্র যদি খায়দায় আর পড়াশুনা করে তাহলে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ৪ বছরে তার ন্যূনতম খরচ প্রায় ৮১,০৫৬ মার্কিন ডলারপ্রতি ঘন্টায় ন্যূনতম মজুরি ৮.৬৭ ডলার ধরে পড়াশুনার পাশাপাশি সপ্তাহে ৩০ ঘন্টা করে কাজ করতে পারলে সে চার বছরে আয় করবে ৪৫,৮৯১ ডলার অর্থাৎ প্রয়োজনীয় খরচের অর্ধেক এবং তার বাবার প্রচুর টাকা না থাকলে এ রকম একজন শিক্ষার্থীকে তাই হাজার হাজার টাকা ঋণ করতে হয়সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো পাশ করার পর ভালো বেতনের একটা চাকরি না হলে জীবনের প্রায় অনেকটা সময় তার ঋণ পরিশোধে চলে যায়
দালাল কিছু অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশেও এরকম ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষার প্রস্তাব করেছেনঅতএব, সাধু সাবধান! এইসব বাস্তবতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ওয়াল স্ট্রীট দখল করতে আসা শিক্ষার্থীরা তাই একাত্ম হয়ে যায়, আওয়াজ তোলে একই লড়াইয়ের 'ডব ধৎব ৯৯%' বা 'চবড়ঢ়ষব নবভড়ৎব ঢ়ৎড়ভরঃ'
আসল কথা হলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদপ্রান্তে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখন লুটোপুটি খায় অন্যান্য বিষয়ের মতো শিক্ষাও তা থেকে রেহাই পায় নাসাম্রাজ্যবাদ তার ঔপনিবেশিক শক্তি সংহত করার লক্ষ্যে প্রধান আঘাত হানে এখানেইরাষ্ট্রের স্বভাব, প্রকৃতি ও চরিত্রের সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণতাই, সমস্যাটা মূলত রাজনৈতিকএ সম্পর্কিত ইন্টাররিলেশনটাকে আগে খুঁজে বের করতে হবেপ্রতিটি জায়গায় রাজনীতি সচেতন চিন্তা নিয়ে কাজ করতে হবে, সর্বোপরি সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হবে রাজনৈতিকভাবে
সচেতন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংকল্পের সাথে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগ্রাম গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সপক্ষের শিক্ষা বা শিক্ষানীতি প্রণয়ন সম্ভবমনে রাখতে হবে, মেকলের ভূত ফিরে ফিরে আসে, এর নির্মূলই একমাত্র পথ
তথ্যসূত্রঃ ১. আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিক-নির্দেশনা -ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন২. আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও অসাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ     -মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী৩. অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের বক্তৃতা৪. বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা৫. ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন ব্লগ৬. বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্রফ্রন্টের পত্রিকা৭. বিশেষ কৃতজ্ঞতা- তানভীর তজিব, কল্লোল মোস্তফা, আসিফ মহিউদ্দীন, নাহিদ হাসান

No comments

আমাদের ঠিকানা

রংপুর।, Bangladesh
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, টাউন হল চত্বর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭১৯৪৬৩৫৪১, ০৭১৪৬০৭০৬৩৪, ০১৭৩৮২৮০২০১। E-mail: muktochintabcp@gmail.com
Powered by Blogger.