স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু
(জন্ম নভেম্বর ৩০, ১৮৫৮ – মৃত্যু নভেম্বর ২৩, ১৯৩৭) একজন সফল বাঙালি বিজ্ঞানী। তার গবেষণার প্রধান দিক ছিল উদ্ভিদ ও তড়িৎ চৌম্বক। তার আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরুপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকর্ডার অন্যতম। জগদীশ চন্দ্রের স্ত্রী অবলা বসু ছিলেন একজন বিদূষী ডাক্তার ও শিক্ষাবিদ। জগদীশ চন্দ্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাংলা ভাষায় ছোটদের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য জগদীশ চন্দ্র 'অব্যক্ত' নামে একটা বই লিখেছিলেন।
তিনি গাছের প্রাণ এবং মার্কনির আগেই রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে বাঙালি মহলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। প্রথম ধারণাটি একেবারেই ভুল। গাছের প্রাণ সম্পর্কে অনেক প্রাচীনকাল থেকেই পণ্ডিতেরা সম্পূর্ণ নিঃসংশয় ছিলেন। জগদীশ চন্দ্র কেবল প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন যে, উদ্ভিদ এ প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে; এক কথায় উদ্ভিদজীবন প্রাণীজীবনের ছায়া মাত্র। দ্বিতীয় ধারণাটিও যে অর্থ বলা হয় সে অর্থে সঠিক নয়। মার্কনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফল হল রেডিও। কিন্তু জগদীশ চন্দ্র কাজ করেছিলেন অতিক্ষুদ্র তথা (micro wave) নিয়ে যার প্রয়োগ টেলিভিশন এবং রাডার যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেখছি।
জীবনী
@@ প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত বিক্রমপুর নামক স্থানের রাঢ়িখাল গ্রামে। তার বাবা ভগবান চন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এর আগে তিনি ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভগবান চন্দ্রই এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ব্রাহ্ম সমাজের একজন বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি আর সবার মত নিজের ছেলেকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করাননি। জগদীশ চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। বাংলা স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে জগদীশ চন্দ্রের নিজস্ব যুক্তি ছিল। তিনি মনে করতেন ইংরেজি শেখার আগে এদেশীয় ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা আয়ত্ব করা উচিত। বাংলা স্কুলে পড়ার ব্যাপারটি জগদীশ চন্দ্রের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে তেমনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতেও সাহায্য করেছে। এর প্রমাণ বাংলা ভাষায় রচিত জগদীশের বিজ্ঞান প্রবন্ধগুলো। ভাষার প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ ছাড়াও ভগবান চন্দ্র চেয়েছিলেন তার পুত্র দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে মানুষ হোক এবং তার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। তার এই সিদ্ধান্ত কখনও পরিবর্তিত হয়নি। প্রথম বাংলা স্কুলে অধ্যয় সম্বন্ধে জগদীশ ১৯১৫ সালে অনুষ্ঠীত বিক্রমপুর সম্মেলনে বলেছিলেন:
“
At that time, sending children to English schools was an aristocratic status symbol. In the vernacular school, to which I was sent, the son of the Muslim attendant of my father sat on my right side, and the son of a fisherman sat on my left. They were my playmates. I listened spellbound to their stories of birds, animals and aquatic creatures. Perhaps these stories created in my mind a keen interest in investigating the workings of Nature. When I returned home from
school accompanied by my school fellows, my mother welcomed and fed all of us without discrimination. Although she an orthodox old fashioned lady, she never considered herself guilty of impiety by treating these ‘untouchables’ as her own children. It was because of my childhood friendship with them that I could never feel that there were ‘creatures’ who might be labelled ‘low-caste’, I never realised that there existed a ‘problem’ common to the two communities, Hindus and Muslims.
”
জগদীশ কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর ইংল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল আইসিএস পরীক্ষায় পাশ করে দেশে এসে জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া। কিন্তু ভগবান চন্দ্র স্বভাবতই এতে রাজী হননি। ছেলে বিদেশে যাক তা তিনি ঠিকই চেয়েছিলেন, তবে আইসিএস দিতে নয়, আধুনিক কৃষিবিদ্যা শিখে দেশীয় কৃষিকাজের উন্নতি সাধনের জন্য।
বাবার ইচ্ছা ও তার আগ্রহের মধ্যে টানাপোড়েনের শেষ পর্যায়ে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়বেন বলে স্থির করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্যেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ১৮৮০ সালে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে বেশিদিন এই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। অচিরেই চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠ ছেগে দিয়ে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস পাশ করেন। এর পরপরই বা প্রায় একই সাথে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাঠ সম্পন্ন করেন। বিদেশে অধ্যয়ন শেষে দেশে ফিরে আসেন ১৮৮৫ সালে। এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অস্থায়ী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। তার গবেষণার সূত্রপাতও এখান থেকেই। তার মহান বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহের সূতিকাগার হিসেবে এই কলেজকে আখ্যায়িত করা যায়। আমরা যে জগদীশ চন্দ্রের সাথে পরিচিত তার জন্ম এখান থেকেই।
প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান
প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার চাকুরিটি তিনি পেয়েছিলেন বড়লাট বাহাদুরকে ধরাধরি করে। কিন্তু একে তো এটি ছিল অস্থায়ী তার উপর ভারতীয় হওয়ায় সেখানে তার বেতন নির্ধারণ করা হল ইউরোপীয় অধ্যাপকদের বেতনের অর্ধেক। এই অন্যায় বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছিলেন জগদীশ। দীর্ঘকাল তিনি কোন বেতন না নিয়েই শিক্ষকতা করে যান এবং অনেক ইংরেজ অধ্যাপকদের থেকে অধিক দক্ষতা প্রদর্শনে সমর্থ হন। এতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করে। তার তিন বছরের বকেয়া মাইনে পরিশোধ করে দেয়া হয় এবং এর সাথে তার চাকুরিটিও স্থায়ী হয়ে যায়। তখন থেকেই ইউরোপীয় ও ভারতীয় অধ্যাপকদের বেতনের বৈষম্য দূরীভূত হয়। ইউরোপীয় শিক্ষকদের অনেকেই মনে করতেন ভারতীয়রা বিজ্ঞান শিক্ষাদান এবং গবেষণা কাজের উপযুক্ত নয়। জগদীশ তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করেন। তার সফলতার প্রমাণ পাওয়া যায় তার হাতে গড়ে উঠা একদল কৃতী শিক্ষার্থী যাদের মধ্যে আছেন: সত্যেন্দ্রনাথ বসু, দেবেন্দ্রমোহন বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞান মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রী প্রদান করে। এই গবেষণাগুলো একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বিচার করতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত ৪ ঘন্টা শিক্ষকতার পর যেটুকু সময় পেতেন তখন তিনি এই গবেষণার কাজ করতেন। তার উপর প্রেসিডেন্সি কলেজে কোন উন্নতমানের গবেষণাগার ছিলনা, অর্থ সংকটও ছিল প্রকট। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি পরীক্ষণের জন্য উপকরণ প্রস্তুত করতেন। তার এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানি। সফল বক্তৃতা শেষে ১৮৯৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সস্ত্রীক দেশে ফিরে এসেছিলেন।
@@বিয়ে
১৮৮৭ সালে জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে অবলার বিয়ে হয়। অবলা ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা। বিয়ের আগে অবলা বসু কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে চাইলেও তাকে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি, কারণ সেখানে তখন মেয়েদের পড়ানো নিষেধ ছিল। ১৮৮২ সালে বঙ্গ সরকারের বৃত্তি নিয়ে অবলা মাদ্রাজ (বর্তমান চেন্নাই) যান পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন শুরু করলেও অসুস্থতার কারণে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন। তাদের বিয়ের সময় জগদীশচন্দ্র বসু আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে আবার তিনি তখন কলেজ থেকে বেতন নিতেন না। এছাড়া জগদীশের বাবার কিছু ঋণ ছিল যার কারণে তার পরিবারকে পথে বসতে হয়। এর মধ্য থেকে অবলা ও জগদীশ অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসেন এবং সব ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ হন। সব ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কিছুদিন মাত্র বসুর পিতা-মাতা জীবিত ছিলেন।
@@গবেষণা কর্ম
অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি ও প্রেরণ
জগদীশের আঠারো মাসের সেই গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞনী হের্ৎস প্রতক্ষভাবে বৈদ্যুততত তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ নিয়ে ররও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরী করেন। এ ধরণের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাউক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।
@@উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের সাদৃশ্য
বক্তৃতাসমূহ
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে বক্তৃতা, লিভারপুল
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে তার বক্তৃতার বিষয় ছিল "অন ইলেকট্রিক ওয়েভ্স"। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে করা পরীক্ষণগুলোর উপর ভিত্তি করেই তিনি বক্তৃতা করেন যা ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমৎকৃত করে। অতিশীপর বৃদ্ধ বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বক্তৃতা শোনার পর লাঠিতে ভর দিয়ে এসে জগদীশের স্ত্রী অবলা বসুকে তার স্বামীর সফলতার জন্য অভিবাদন জানান। জগদীশ এবং অবলা দুজনকেই তিনি তার বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এই বিষয়ের উপর বিখ্যাত সাময়িকী "টাইম্স"-এ একটি রিপোর্ট ছাপা হয় যাতে বলা হয়, "এ বছর ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বিদ্যুৎ-তরঙ্গ সম্পর্কে অধ্যাপক বসুর বক্তৃতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, কেমব্রিজের এম.এ. এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ সাইন্স এই বিজ্ঞানী বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন সম্পর্কে যে মৌলিক গবেষণা করেছেন, তার প্রতি ইউরোপীয় বিজ্ঞানী মহলে আগ্রহ জন্মেছে। রয়্যাল সোসাইটি বিদ্যুৎরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও প্রতিসরাঙ্ক নির্ণয়ের গবেষণাপত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।" এই বক্তৃতা বিষয়ে পারসন্স ম্যাগাজিন লিখেছিল:
“
বিদেশী আক্রমণে ও অন্তর্দ্বন্দ্বে বহুবছর ধরে ভারতে জ্ঞানের অগ্রগতি ব্যাহত হয়ে চলেছিল... প্রবল বাধাবিপত্তির মধ্যে গবেষণা চালিয়ে একজন ভারতীয় অধ্যাপক আধুনিক বিজ্ঞানের জগতেও বিশেষ উল্লেখযোগ্য কাজের নজির রেখেছেন। বিদ্যুৎরশ্মি বিষয়ে তার গবেষণাপত্র ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে পঠিত হবার সময় তা ইউরোপীয় জ্ঞানীগুণী মহলে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। তাঁর ধৈর্য ও অসাধারণ শক্তির প্রশংসা করতেই হয়- অন্তত যখন ভাবি যে তিনি মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে বিদ্যুতের মতো অত্যন্ত দুরূহ বিভাগের ছয়টি উল্লেখযোগ্য গবেষণা শেষ করেছেন।
”
রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে সান্ধ্য বক্তৃতা
লরিভারপুলে বক্তৃতার পর তার আরও সাফল্য আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে সান্ধ্য বক্তৃতা দেয়ার নিমন্ত্রণ। এই বক্তৃতাটি আনুষ্ঠানিকভাবে "ফ্রাইডে ইভনিং ডিসকোর্স" নামে সুপরিচিত ছিল। এই ডিসকোর্সগুলোতে আমন্ত্রিত হতেন একেবারে প্রথম সারির কোন আবিষ্কারক। সে হিসেবে এটি জগদীশচন্দ্রের জন্য একটি দুর্লভ সম্মাননা ছিল। ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি ১৯ তারিখে প্রদত্ত তার এই বক্তৃতার বিষয় ছিল "অন দ্য পোলারাইজেশন অফ ইলেকট্রিক রেইস" তথা বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন। এই বক্তৃতার সফলতা ছিল সবচেয়ে বেশি। বায়ুতে উপস্থিত বেশ কিছু বিরল গ্যাসের আবিষ্কারক হিসেবে খ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড র্যালে তার বক্তৃতা শুনে এবং পরীক্ষাগুলো দেখে এতোটাই বিস্মিত হয়েছিলেন তার কাছে সবকিছু অলৌকিক মনে হয়েছিল। তিনি এ সম্পর্কে বলেছিলেন, "এমন নির্ভুল পরীক্ষা এর আগে কখনও দেখিনি- এ যেন মায়াজাল"। এই বক্তৃতার সূত্র ধরেই বিজ্ঞানী জেম্স ডিউয়ার-এর সাথে জগদীশচন্দ্রের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। ডিউয়ার গ্যাসের তরলীকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। এই বক্তৃতা সম্বন্ধে "স্পেক্টেটর" পত্রিকায় লিখা হয়েছিল, "একজন খাঁটি বাঙালি লন্ডনে সমাগত, চমৎকৃত ইউরোপীয় বিজ্ঞানীমণ্ডলীর সামনে দাঁড়িয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত দুরূহ বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন- এ দৃশ্য অভিনব।"
এই বক্তৃতার পর ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে আমন্ত্রণ আসে এবং তিনি সেখানে কয়েকটি বক্তৃতা দেন। সবখানেই বিশেষ প্রশংসিত হন। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক কর্ন তার বন্ধু হয়ে যায় এবং তিনি ফ্রান্সের বিখ্যাত বিজ্ঞান সমিতি Societe de Physeque-এর সদস্য মনোনীত হন।
সুখ্যাতি
বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জগদীশ চন্দ্রের সফলতার কথা কর্মজীবন অংশেই উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান গবেষণায়ও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিলেন যার জন্য তার সুখ্যাতি তখনই ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতীয়রাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশ চন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে। আর আইনস্টাইন তার সম্পর্কে নিজেই বলেছেন:
“
জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।
”
@@সম্মাননা
নাইটহুড, ১৯১৬
রয়েল সোসাইটির ফেলো, ১৯২০
ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য, ১৯২৮
ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি, ১৯২৭
লিগ অফ ন্যাশন্স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়া-এর প্রতিষাঠাতা ফেলো। এর বর্তমান নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমি।
@@রচনাবলী
Responses in the Living and Non-living (১৯০২)
Plant Responses as a Means of Physiological Investigations (১৯০৬)
Comparative Electrophysiology (১৯০৭)
Physiology of the Asent of Sap (১৯২৩)
Physiology of Photosynthesis (১৯২৪)
Nervous Mechanism of Plants (১৯২৫)
Collected Physical Papers (১৯২৭)
Motor Mechanism of Plants (১৯২৮)
Growth and Tropic Movement in Plants (১৯২৯)
তথ্যঃউইকি থেকে নেয়া।
No comments