Header Ads

Header ADS

ইউক্যালিপটাসঃ আগ্রাসী এক বিদেশী প্রজাতি -মুহাম্মদ শাহ্ ফরিদ


আজ তারা কই সব? ওখানে হিজল গাছ ছিল এক -/ পুকুরের জলে বহুদিন মুখ দেখে গেছে তার;
-জীবনানান্দ দাশ 

কত কি-ই তো ছিল! এদেশে ছিল জীববৈচিত্রে ভরা প্রচুর বনভূমি আরও কত কি! মুনাফাখোরদের লোভে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে নির্বিচারে, ভরাট হয়েছে বিল, অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত হয়েছে বাঁধ। আর এইসবের ফলে প্রতি বছর লেগে আছে বন্যা, অনাবৃষ্টি সহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ। ভবিষ্যতে ও বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সমূহ সম্ভাবনা আমাদের সামনে স্পষ্ট। এই বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে মোট আয়তনে প্রয়োজনীয় বনভূমি রক্ষা, সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুষ্ঠু ও সুশৃংঙ্খল রাখতে গাছ লাগানসহ নানা উপায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের কথা ভাবছে মানুষ। এই যখন ভাবনা তখন কোন প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে, তা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে কতটুক ভূমিকা রাখবে নাকি আমাদের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, তা বারবার ভেবে দেখা দরকার। বৃক্ষরোপনের কথা ভাবলে আমরা দ্রুতবর্ধনশীলতার যুক্তি দেখিয়ে বিদেশী এবং আগ্রাসী প্রজাতির কিছু গাছের কথা ভাবি সর্বাগ্রে ইউক্যালিপটাস তাদের মধ্যে অন্যতম। আগ্রাসী প্রজাতির এই উদ্ভিদটি আমদানী করা হয়েছিল কাগজের মন্ড তৈরীর উদ্দেশ্যে তা সফল হয়নি। একেকটি ইকোসিস্টেমের বিশেষ ধরণের পরিবেশকে কেন্দ্র করে ঘনিষ্ঠ পারস্পারিকতার মধ্যে বাস করে অনেক প্রজাতি। এদের মধ্যে বহু ধরণের প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে জীববৈচিত্রের সহাবস্থান করার মত প্রাকৃতিক ভারসাম্য। একটি উদ্ভিদ কমিউনিটিতে খাদ্য ও সূর্যালোকের জন্য যে আন্তঃ প্রজাতিক সংগ্রাম পরিলক্ষিত হয় সেই সংগ্রামে ইউক্যালিপটাস এর সঙ্গে অন্যান্য প্রকৃতিগতভাবে পাওয়া দেশীয় প্রজাতি টিকতে পারেনা। এই উদ্ভিদ এত বেশী পরিমাণ পানি শোষণ করে যে, এর আশেপাশে অন্যান্য প্রজাতির গাছপালা স্বাভাবিকভাবে জন্মাতে কিংবা বেড়ে উঠতে পারে না। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এই সকল আগ্রাসী প্রজাতির গাছে পাখিও বাসা বাঁধেনা। তেমন কোন ঘাস এদের নিচে জন্মাতে পারেনা। অর্থাৎ একটি দেশীয় প্রজাতির গাছকে ঘিরে যে প্রতিবেশ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয় ইউক্যালিপটাস নামের এই আগ্রাসী প্রজাতি তার সহায়ক নয়। আগ্রাসী এই প্রজাতি আমাদের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, প্রাকৃতিক বসতিকে নষ্ট করছে এবং দেশীয় প্রজাতির প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বাস যোগ্য এই প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে বৃক্ষরোপনকে আমরা আন্দোলনে পরিনত করছি। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু যে প্রজাতিগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করছে মরুকরণ প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখে অবশ্যাম্ভাবী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্রকে, সেই আগ্রাসী প্রজাতিগুলোকে বর্জন করতে হবে আমাদের আস্তিত্বের স্বার্থেই। প্রাকৃতিক নিয়ম হল, যে যেখানে জন্মে সে সেখানে ভালভাবে বেড়ে ওঠে এবং আশেপাশের পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়। আমাদের দেশীয় প্রজাতির উপর গবেষণা করে সেই প্রজাতিগুলোর মাধ্যমেই প্রাকৃতিক বনকে ভরিয়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনষ্টিটিউটের দায়িত্বহীনতার ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছি এই আগ্রাসী-বিদেশী প্রজাতি। বহিরাগত কোন প্রজাতি বনায়ণের ক্ষেত্রে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে ওই প্রজাতি আমাদের বাস্তুসংস্থান তথা জীববৈচিত্রের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াবে কি না। এক্ষেত্রে আমাদের নির্ভর করতে হবে জনগণের হাজার বছরের অভিজ্ঞতা ও অর্জিত জ্ঞানের উপর। এবং এই সম্পকির্ত নীতিমালা তৈরীর ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ফিরে পাব জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ।

No comments

আমাদের ঠিকানা

রংপুর।, Bangladesh
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, টাউন হল চত্বর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭১৯৪৬৩৫৪১, ০৭১৪৬০৭০৬৩৪, ০১৭৩৮২৮০২০১। E-mail: muktochintabcp@gmail.com
Powered by Blogger.