ডেসটিনির পুরস্কার প্রাপ্তগণ কী বলেন? / নাহিদ নলেজ
আমরা কিছুদিন যাবৎ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ডেসটিনি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জুয়াচুরির চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। এতে আমরা একদিকে স্বপ্ন বেচার যে অভিনব দিকগুলো জানছি, স্বপ্ন ক্রেতার যে পরিমাণ আমরা জানছি, তাতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ৩১/০৩/১২ তারিখের প্রথম আলোয় ডেসটিনির রফিকুল আমীন জানিয়েছেন বর্তমানে ডেসটিনির সাথে জড়িত ৪৬ লক্ষ ৬ হাজার মানুষ। আর্থিক ক্ষতির দিকটি ছাড়াও এত বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রায় ৯০ ভাগই তরুণ, যারা লেখাপড়া শিকেয় তুলে ডান হাতে-বাম হাতে মরীচিকার পেছনে দৌড়ে বেড়ালো, নিজে প্রতারিত হয়ে অন্যকেও প্রতারণার জালে আটকানোর চক্রান্তে যুক্ত হলো অধঃপতিত হলো, তার হিসাব কে করবে? এই প্রতারণার নোংরা চর্চার জের জনগোষ্ঠী হিসেবে কতকাল বয়ে বেড়াতে হবে কে জানে !
আমরা দৈনিক যুগান্তরের মাধ্যমে জেনেছি, ডিসি, উপজেলা, ইউপি চেয়ারম্যানদের বিপুল অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছে নানান কারণে। কিন্তু আমাদের কথা অন্যখানে। ডিসি-চেয়ারম্যানদের ঘুষ দিয়ে জমি কেনা গিয়েছে হয়তো, কিন্তু অর্ধকোটি তরুণের মাথা কিনতে তো অন্যকিছু লাগে। তাহলে এই মাথা কিনতে কাদের ব্যবহার করা হলো? কাদের দেখে অজস্র তরুণ প্রতারণার জালকে মুক্তির জাল মনে করলো? নিশ্চয়ই যারা আমাদের সমাজে আদর্শ মানুষ বলে পরিচিত, তাঁরা যখন ডেসটিনির লক্ষ টাকাসহ ক্রেস্ট উপহার নেন, তখন উপহারপ্রাপ্ত গুণীজন অর্ধ ভক্ত দিশাহীন মুক্তিআকুল অর্ধকোটি তরুণ কী বার্তা পান?
আমরা ইংরেজ আমলে রায়-বাহাদুর, রাজা-মহারাজা, চৌধুরী উপহার প্রাপ্তদের দেখেছি,
আইয়ুব খাঁনের লেখক কেনার প্রকল্প রাইটার্স-গিল্ডের চাঞ্চল্যকর ঘটনা জেনেছি আহমদ ছফা সহ বিভিন্ন জনের লেখায়-আজকের অনেক বিপ্লবী লেখকদের দালালির রেকর্ড সেখানে আছে, তসলিমা নাসরিনের আনন্দ বাজার পুরস্কারের ঘটনাও আমরা জানি, আহমদ ছফা বেঁচে থাকতে বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাননি। কিন্তু কেন? এখানেই নিহিত আছে শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি। অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠান কাউকে যখন পুরস্কার দেয়, সেখানে দু’টো দিক থাকে। একটি হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের যে দৃষ্টিভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে এমন ব্যক্তি। আরকটি হচ্ছে মিল থাকুক বা না থাকুক, সেই ব্যক্তির ভাবমূর্তীকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ হাসিল করা।
এখন কথা হচ্ছে যেসব কথিত মহান ব্যক্তিগণ ডেসটিনির এই লক্ষ টাকার পুরস্কার নিয়ে অর্ধকোটি জনগণকে প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা কী বলবেন ? তাদের লেখা ছাড়া যেহেতু কোন দৈনিকই উপসম্পাদকীয় পাতা পূরণ করতে পারবে না, সেহেতু হয়তো পত্রিকায় তাদের উজ্জ্বল নামগুলো অভিযুক্ত হবে না কিন্তু মুখে মুখে সেসব ছড়িয়ে পড়বেই। অর্ধকোটি মুখ থেকে ষোলকোটি কানে প্রতারক পুরস্কার প্রাপ্ত মহানদের নাম ছড়িয়ে পড়তে কতদিন লাগবে? আমাদের কালের নায়করা খলনায়কোচিত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জাতিকে কোথায় নিয়ে গেলেন? ছোট বেলায় পড়েছিলাম আর্থিক ক্ষতি কোন ক্ষতিই না কিন্তু চরিত্র নষ্ট হলে সব শেষ হয়ে যায়। যেসব বুদ্ধিজীবী কথিত কালের নায়কেরা তরুণ সমাজের চরিত্র নষ্ট করলেন তাদের বিচার কীভাবে হবে ? যারা সব শেষ করে দিলেন।
No comments